ধূপগুড়ির বিজয়ী প্রার্থীর শপথ গ্রহণে একেবারে ব্যতিক্রমী পথ নিতে পারে রাজভবন। স্পিকার অথবা ডেপুটি স্পিকারকে এড়িয়ে ‘তৃতীয়’ কাউকে মনোনীত করার কথা এখন রাজভবনের ভাবনায় রয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। এই সূত্রে এ রাজ্যে পরিষদীয় রাজনীতিতে প্রবীণ এক বিধায়কের কথাও শোনা যাচ্ছে সরকারি মহলের এই চর্চায়। পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বুধবারও জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে রাজ্যপালের তরফে তাঁদের নতুন করে কিছু জানানো হয়নি।
উপনির্বাচনে বিজয়ী নির্মল চন্দ্র রায়ের বিধায়ক হিসেবে শপথ গ্রহণ ঘিরে রাজভবন ও নবান্নের মধ্যে দফায় দফায় চিঠি চালাচালির মধ্যেই রাজভবনের এই নতুন ভাবনা সামনে আসতে শুরু করেছে। সূত্রের খবর, শপথ গ্রহণের দায়িত্ব পালনের জন্য স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের বদলে একটি তৃতীয় মুখের কথা ভাবা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তা চূড়ান্ত হলে সরকার পক্ষ কী অবস্থান নেয়, তা নিয়েও রাজনৈতিক স্তরে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। পরিষদীয় রাজনীতির এক প্রবীণের কথায়, ‘‘শপথ গ্রহণের দায়িত্ব রাজ্যপালের। সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা রয়েছে, নিজে তা না করলে সেই কাজে অন্য কাউকে একমাত্র তিনিই মনোনীত করতে পারেন। সেখানে স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের কথা বলা নেই।’’ স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত শপথগ্রহণের দিনক্ষণ সম্পর্কে বিধানসভাকে কিছু জানানো হয়নি।’’
এই অবস্থায় রাজভবনের ব্যতিক্রমী ভাবনার এই ‘তৃতীয় মুখ’ কে হতে পারেন, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, পরিষদীয় রাজনীতিতে, বিশেষ করে বিধানসভায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে, এমন গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিধায়ককেই এই দায়িত্ব দিতে পারেন রাজ্যপাল। এই মুহূর্তে রাজ্য বিধানসভায় এই রকম হাতে গোনা কয়েক জন রয়েছেন। বিধানসভায় প্রতিনিধিত্বের সূত্রে এ ক্ষেত্রে অনেকের থেকে এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। এই মুহূর্তে রাজ্য বিধানসভায় সব থেকে পুরনো এই বিধায়ককেই বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থীর শপথগ্রহণ করানো দায়িত্ব দিতে পারেন রাজ্যপাল, চর্চায় রয়েছে সেই সম্ভাবনা। তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে চোপড়ার বিধায়কের তরফে জানানো হয়েছে, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর কাছে এই রকম কোনও বার্তা আসেনি।
প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ১১ বারের বিধায়ক করিমের সঙ্গে অবশ্য এই মুহূর্তে তাঁর দল তৃণমূলের সম্পর্ক খুব ‘মসৃণ’ নয়। বেশ কয়েক মাস ধরেই চোপড়ার বিধায়ক দলের অভ্যন্তরে নানা প্রশ্ন তুলে নেতৃত্বের বিরাগভাজন হয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটে দলের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বহু আসনে নির্দল (গোঁজ) প্রার্থীদের সমর্থন করেছিলেন তিনি। সে দিক থেকেও রাজভবন করিমকে বেছে নিলে এই টানাপড়েন নতুন মোড় নিতে পারে। শেষ পর্যন্ত রাজ্যপাল এই সিদ্ধান্ত নিলে তা শাসকের কাছে খুব একটা ‘গ্রহণযোগ্য’ না-ও হতে পারে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)