Advertisement
E-Paper

শঙ্খ-নবনীতা-পবিত্রদের ডাকলেন কেশরী, শুধুই চা চক্র? নাকি...

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে নাগাদ রাজভবনে আমন্ত্রিত বিদ্বজ্জনেরা। কারা রয়েছেন আমন্ত্রিতের তালিকায়? শঙ্খ ঘোষ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, নবনীতা দেবসেন, পবিত্র সরকার, সুকান্ত চৌধুরী, গৌতম ভদ্র, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, সুরঞ্জন দাস, মীরাতুন নাহার।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৮ ১১:১৯
চা চক্রে বিদ্বজ্জনদের কী বলবেন রাজ্যপাল? জল্পনা তা নিয়েই। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

চা চক্রে বিদ্বজ্জনদের কী বলবেন রাজ্যপাল? জল্পনা তা নিয়েই। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

চা খেতে ডেকেছেন রাজ্যপাল। বাংলার সুশীল সমাজের একেবারে সামনের সারিতে যে সব নাম, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই আমন্ত্রণ পেয়েছেন। শুধুমাত্র ‘চা খাওয়ার’ আমন্ত্রণ। খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই জোর জল্পনা শুরু হয়েছে নানা মহলে। আর শাসক শিবিরে শুরু হয়েছে ভ্রূ কুঞ্চন।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে নাগাদ রাজভবনে আমন্ত্রিত বিদ্বজ্জনেরা। কারা রয়েছেন আমন্ত্রিতের তালিকায়? শঙ্খ ঘোষ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, নবনীতা দেবসেন, পবিত্র সরকার, সুকান্ত চৌধুরী, গৌতম ভদ্র, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, সুরঞ্জন দাস, মীরাতুন নাহার।

যাঁরা চা-চক্রে ডাক পেয়েছেন, মতাদর্শগত বা রাজনৈতিক দিক থেকে তাঁদের অধিকাংশই কিন্তু তৃণমূল বিরোধী শিবিরের। তৃণমূলপন্থী মুখ একটাও নেই, এমন নয়। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বে হিংসার অভিযোগের প্রেক্ষিতে যাঁরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তথা শাসক দলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন, চা চক্রে আমন্ত্রিতদের তালিকায় তাঁদের নামই বেশি। তৃণমূলপন্থী বা শাসক ঘনিষ্ঠ যে দু’একটি নাম দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, তাঁরা ভারসাম্যের খাতিরেই আমন্ত্রিত বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মত।

রাজ্যে রাজনৈতিক টানাপড়েন যখন চরমে উঠেছে, তখন রাজ্যপাল সামনের সারির কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিক্ষাবিদদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন। যাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন, তাঁদের অধিকাংশই শাসকের বিরুদ্ধে সরব। অতএব রাজ্যপালের এই কর্মসূচি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

পবিত্র সরকার চা চক্রে যোগ দিচ্ছেন। বললেন, ‘‘রাজ্যপাল কথা বলতে চাইতেই পারেন। এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজার কোনও প্রয়োজন নেই।’’

বিদ্বৎসমাজের সঙ্গে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান কথা বলবেন, এতে অস্বাভাবিক কিছু নেই ঠিকই। কিন্তু কোনও সাংবিধানিক পদাধিকারী এ রাজ্যে আগে কখনও কি এ ভাবে বিদ্বজ্জনদের আলাপচারিতায় ডেকেছেন? পবিত্র সরকার বললেন, ‘‘ডেকেছেন। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে ইন্দিরা গাঁধী ডেকেছিলেন। অনেকেই সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত জরুরি অবস্থা নিয়ে ইন্দিরা গাঁধীকে প্রশ্নও করেছিলেন।’’

নবনীতা দেবসেন জানালেন, তিনি বৃহস্পতিবারের চা চক্রে যোগ দিতে পারছেন না। শরীর ভাল নেই। কিন্তু যদি তিনি যেতে পারতেন আর যদি রাজ্যের চলতি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হত, তা হলে তিনি কি সেই আলোচনায় অংশ নিতেন? নবনীতা জানালেন, অবশ্যই অংশ নিতেন। কী বলতেন? লেখিকা বললেন, ‘‘গিয়ে ঝগড়া করে আসতে পারলে ভালই লাগত। কারণ আমরা কেউ ভাল নেই। রাজ্যও ভাল নেই, দেশও ভাল নেই। রাজ্যের সমস্যাটা তাও সাময়িক সমস্যা। পঞ্চায়েত ভোটের প্রেক্ষিতে এই সমস্যাটা তৈরি হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই আর। তবে দ্রুত আমরা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠব বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু দেশের সমস্যা তো স্থায়ী সমস্যা হয়ে উঠেছে। দেশে বিভেদ নীতি চলছে। দেশের অর্থনীতি, শিক্ষানীতি— সব শেষ করে দিচ্ছে। ভারতীয় সংস্কৃতি যে থামগুলোর উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেগুলোর গোড়ায় আঘাত করা হচ্ছে। সেটা খুব বড় সঙ্কট।’’

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় রাজভবনে যাচ্ছেন না। তিনি বললেন, ‘‘ আমি রাজ্যপালকে জানিয়ে দিয়েছি যে, যাচ্ছি না।’’ কেন যাচ্ছেন না? সাহিত্যিকের সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘ব্যক্তিগত কারণে।’’

রাজ্যের শাসক দল কী ভাবছে? পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘রাজ্যপাল কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন, এ নিয়ে এমনিতে বলার কিছু নেই। কিন্তু চোলি কে পিছে কেয়া হ্যায়, সেটা নিয়ে একটা প্রশ্ন থাকতে পারে।’’ পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কথায়, ‘‘চা চক্রটা হোক। তার পরেই বোঝা যাবে কী ব্যাপার। যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বললেই জানা যাবে।’’

রাজভবন অবশ্য এ সব জল্পনা নিয়ে একটুও ভাবিত নয়। রাজ্যপালের মতো সাংবিধানিক পদাধিকারী বাংলার বিদ্বজ্জনদের চা খেতে ডেকেছেন— এ নিয়ে এত জল্পনার কিছু থাকতে পারে না বলেই রাজভবনের আধিকারিকরা মনে করছেন। রাজ্যপালের এই চা চক্র নিখাদ সৌজন্য সাক্ষাৎ, দাবি রাজভবন সূত্রের।

Governor Keshri Nath Tripathi Raj Bhavan Intelligentsia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy