Advertisement
১৬ মে ২০২৪

‘সৈনিক’ বলে পার্থদের বল দিলেন রাহুল

তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তোপ ছিল, রাজভবন বিজেপি এবং আরএসএসের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। তৃণমূলের এই আক্রমণের পাল্টা জবাব দিচ্ছিলেন বিজেপি নেতারা।

রাহুল সিনহা। ফাইল চিত্র।

রাহুল সিনহা। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৭ ০৩:১১
Share: Save:

রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে ‘বিজেপি-র তোতাপাখি’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বিজেপি-রই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ রাজ্যপালকে ‘মোদী বাহিনীর সৈনিক’ আখ্যা দিয়ে বসলেন! যার জেরে রাজ্যপাল নিয়ে বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ হল বৃহস্পতিবার। সেই সঙ্গেই তৃণমূল আরও জোর গলায় ‘ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে’ বলে দাবি করার সুযোগ পেয়ে গেল!

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সংঘাতের জেরে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি-র মুখপাত্রের মতো আচরণ করার অভিযোগ এনেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েনেরা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, রাজ্যপাল ত্রিপাঠী বিজেপি-র ব্লক সভাপতির মতো কথা বলেছেন! তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তোপ ছিল, রাজভবন বিজেপি এবং আরএসএসের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। তৃণমূলের এই আক্রমণের পাল্টা জবাব দিচ্ছিলেন বিজেপি নেতারা। তাঁরা পাল্টা বলছিলেন, নবান্ন বরং তৃণমূলের রাজনৈতিক কাজকর্মের জায়গা হয়ে উঠেছে। এই গোটা আবহেই এ দিন আচমকা নতুন মোচড় এনে দিয়েছে রাহুলবাবুর মন্তব্য।

জন্মদিনে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিতে মালা দিতে গিয়ে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুলবাবু এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূল যদি ভেবে থাকে হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেবে, তারা ভুল ভাবছে। রাজ্যপাল মোদী বাহিনীর সৈনিক।’’ তাঁর এই মন্তব্যই লুফে নিয়েছে তৃণমূল। দলের মহাসচিব পার্থবাবু বলেছেন, ‘‘ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে! আমরা তো বলছিলাম, মোদী সরকারের আমলে রাজভবন বিজেপি-র দলীয় দফতর হিসাবে কাজ করছে।’’ এ সবই অবশ্য সন্ধ্যায় খোদ রাজ্যপাল মুখ খুলে রাজ্য প্রশাসনের পাশে দাঁড়ানোর আগের ঘটনা।

রাহুলবাবুর মন্তব্যে এক দিকে যেমন প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব, তেমনই সন্তুষ্ট হননি রাজ্যপালও। সূত্রের খবর, রাজভবনে কিছু অতিথির সঙ্গে আলাপচারিতায় রাজ্যপাল আক্ষেপের সুরেই বলেন যে, রাহুলবাবুর ওই কথা বলা উচিত হয়নি। পরে সন্ধ্যায় মহাজাতি সদনে একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে তাঁকে রাহুলবাবুর মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যপালের জবাব, ‘‘আমি যা, আমি তা-ই। অন্যেরা কী বলেছেন, তাতে আমার কিছু এসে যায় না।’’

পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় রাহুলবাবুর মন্তব্যের দায় নিতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল সংবিধান সম্পর্কে অভিজ্ঞ, রাজনীতি নিরপেক্ষ এক জন মানুষ। রাহুল সিংহ কী বলেছেন, আমি জানি না। তবে এই ধরনের মন্তব্য করে থাকলে আমি সহমত নই।’’ পরে রাহুলবাবু অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, জাত-ধর্ম না দেখে মোদী যে ভাবে দেশ চালাচ্ছেন, একই পথে মানুষের কথা ভাবছেন রাজ্যপাল ত্রিপাঠী— এ কথাই বলতে চেয়েছিলেন তিনি।

রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের চেয়েও বেশি হামবড়া রাহুল সিংহ!’’ তবে তৃণমূল নেত্রীই বিজেপি-র পালে হাওয়া এনে দিচ্ছেন বলে যে মন্তব্য রাহুলবাবু করেছেন, তার সঙ্গে পূর্ণ সহমত সুজনবাবুরা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE