উপাচার্য-বিতর্কে এ বার রাজ্য সরকারকে পাল্টা কটাক্ষ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। আচার্য হিসেবে রাজ্যপাল যে পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, তার প্রেক্ষিতে আচার্য পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার ভাবনা-চিন্তা করতে হচ্ছে বলে জানিয়ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। প্রয়োজনে অন্তর্বর্তী আচার্য হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী ওই দায়িত্ব পালন করতে পারেন, বলা হয়েছিল। রাজ্যপাল ধনখড় রবিবার কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘আমি শিক্ষামন্ত্রীকে বলছি, আপনি মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপালও করে দিন! তা হলে আপনার শান্তি হবে।’’ সম্প্রতি উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে বিতর্কের জেরেই কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে আচার্য হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ধনখড় তার চেয়েও আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছেন! শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপাল হতে যাবেন কোন দুঃখে? তিন বারের নির্বাচিত (ইলেক্টেড) মুখ্যমন্ত্রী, বিপুল জনসমর্থন তাঁর সঙ্গে। রাজ্যপাল বা আচার্যের মতো মনোনীত (সিলেক্টেড) পদে তিনি যাবেন কেন? ঘুরপথে যাঁরা ক্ষমতা দেখাতে চান, তাঁরাই এমন বলেন।’’
পাহাড় সফরে যাওয়ার পথে এ দিন বাগডোগরা বিমানবন্দরে ধনখড় বলেন, ‘‘শিক্ষা জগতের ক্ষেত্রে কী অবস্থা আমরা দেখছি, আচার্যের জায়গায় কী উপচার্য বসতে পারে! দেশে কোথাও এ সব নেই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দ্বিতীয় বার নিযুক্তি আইনের বই নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যপালের অনুমতি নিয়ে, কমিটি গঠন করে এ সব হয়নি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের সব নিয়োগ নিয়ে আমি সরকারকে আবার বিবেচনা করতে বলেছি। নইলে আমাকে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।’’ এই সূত্রেই শিক্ষামন্ত্রীকে তাঁর কটাক্ষ, মুখ্যমন্ত্রীকেই রাজ্যপাল করে দিন!
শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, উপাচার্যকে তাঁর পদে দ্বিতীয় বার নিয়োগের জন্য রাজ্যপালের সম্মতি ‘বাধ্যতামূলক’ নয়। তা ছাড়া, অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে হচ্ছে, কারণ সেই পরিস্থিতি আচার্য তথা রাজ্যপালই তৈরি করছেন। ব্রাত্যের মতে, ‘‘উপাচার্যের জন্য সার্চ কমিটিতে রাজ্য সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং আচার্যের প্রতিনিধি থাকেন। কিন্তু আচার্যের তরফে নমিনি’র নাম আসছে না। কিন্তু উপাচার্যদের মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে। তাই বাধ্য হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।’’ রাজ্যপালের জন্যই সমস্যার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে শিক্ষামন্ত্রীর অভিযোগ।
নবান্ন ও রাজভবনের সংঘাতে প্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্যপালের পক্ষে দাঁড়িয়েছে বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন খড়্গপুরে চায়ের আড্ডায় মন্তব্য করেছেন, ‘‘এই রাজ্যের সরকার জোর করে রাজ্যপালকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। রবার স্ট্যাম্প বানিয়ে রাখার চেষ্টা করছে! এটা সংবিধানের পক্ষে ভাল নয়। শাসক দলের মধ্যে সকলে যেমন কর্মচারী হয়ে গিয়েছে, যা বলছে সেটাই মেনে নিচ্ছে, রাজ্যপাল তো তেমন নন।’’