E-Paper

প্রতিবন্ধী, তবু বঞ্চিত কিছু যোগ্য চাকরিহারা

২০১৬ সালের চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের নেতৃত্বে অগ্রণী মুখ মেহবুব মণ্ডল। তাঁরও অস্থি সংক্রান্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। মেহবুব জানান, লিখিত পরীক্ষায় কাটঅফ নম্বরের থেকে কিছুটা বেশি পেয়ে একাদশ, দ্বাদশের তথ্য যাচাই তালিকায় তিনি এসেছিলেন।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:২৫

—প্রতীকী চিত্র।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় এ বার হাঁটা, চলা, হাত দিয়ে লেখার ক্ষমতায় প্রতিবন্ধকতা থাকা প্রার্থীদের সাধারণ শ্রেণিতে সংরক্ষণ সুবিধা রাখা হয়নি। লোকোমোটর ডিজ়এবিলিটি বা অস্থি, পেশী, স্নায়ুর সমস‍্যাগ্রস্ত এই পরীক্ষার্থীদের মধ্যেও কয়েকজন চাকরিহারা যোগ‍্য শিক্ষক, শিক্ষিকা রয়েছেন।

২০১৬ সালের চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের নেতৃত্বে অগ্রণী মুখ মেহবুব মণ্ডল। তাঁরও অস্থি সংক্রান্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। মেহবুব জানান, লিখিত পরীক্ষায় কাটঅফ নম্বরের থেকে কিছুটা বেশি পেয়ে একাদশ, দ্বাদশের তথ্য যাচাই তালিকায় তিনি এসেছিলেন। কিন্তু ইন্টারভিউয়ে ছিটকে গিয়েছেন। মেহবুব বলেন, “২০১৬ সালের এসএসসিতেও লোকোমোটর প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নীতি মানা হয়নি। সে-বার সংরক্ষণ না থাকলেও আমি জেনারেল ক্যাটেগরিতে চাকরি পেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের নিয়োগে সংরক্ষণ নীতি কেন মানা হবে না?’’ মেহবুবের দাবি, “দেশের প্রতিবন্ধী আইনে বলা হয়েছে, দৃষ্টি-সংক্রান্ত, শ্রবণ-সংক্রান্ত, অস্থি-সংক্রান্ত এবং অন‍্য নানা শ্রেণির প্রতিবন্ধীরা ১% করে মোট ৪% সংরক্ষণ পাবেন। রাজ্য সরকারের ভুলে অস্থি-সংক্রান্ত প্রতিবন্ধীদের এক শতাংশ আসন লোপাট হয়ে গিয়েছে। এই সংরক্ষণ নীতি না থাকায় আমার মতো অন্তত ৫০ জন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক যাঁদের অস্থি সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, চাকরি খোয়াচ্ছেন। সংরক্ষণ নীতি মেনে নিয়োগের দাবিতে আমরা মামলা করেছি।” ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ়ের অধ্যাপক নন্দিনী ঘোষ বলেন, “এটা অন‍্যায় হচ্ছে। বিষয়টি নজরে আসায় রাজ‍্য প্রতিবন্ধী কমিশনকে সরকারের এই বেনিয়ম নিয়ে চিঠিও লেখা হয়েছে।” সোমবার বিকাশ ভবনের সামনে লোকোমোটর প্রতিবন্ধকতা যুক্ত চাকরিপ্রার্থীরা বিক্ষোভও দেখান।

তবে আর এক চাকরিহারা শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডল বলেন, “এ বার শুধু তফসিলি শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে লোকোমোটর প্রতিবন্ধকতার এক শতাংশ সংরক্ষণ রাখা হয়েছে। তা হলে প্রশ্ন, সাধারণ শ্রেণির পরীক্ষার্থীরা কেন এই সংরক্ষণে বঞ্চিত হবেন।” মেহবুব বলছেন, “২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার বেনিয়ম নিয়ে যত অভিযোগ ছিল, তার মধ্যে এই অস্থি সংক্রান্ত প্রতিবন্ধীদের সংরক্ষণ না মানার দিকটিও ছিল। এ বারও তাই হল। এ বারের নিয়োগও তো তা হলে প্রশ্নের মুখে পড়ছে!”

সুপ্রিম কোর্ট এর আগে জানিয়েছিল, চাকরিহারা শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাবে। চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ আরও ৮ মাস বাড়ানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যে আবেদন করেছে এসএসসি। তাতে যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকদের মধ্যে লোকোমোটর প্রতিবন্ধীদের একাংশ বলছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যদি আট মাস মেয়াদ বাড়াতে রাজিও হয়, আখেরে লাভটা কী? বার বার চাকরি যাওয়ার আশঙ্কাতেই কি আমাদের কর্মজীবন কাটবে?’’ এসএসসি-র এক কর্তা জানাচ্ছেন, তাঁদের নিয়োগে সংরক্ষণ নীতি কী হবে সেটা রাজ্য সরকারের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগ ঠিক করে পাঠায়। এ ক্ষেত্রে এসএসসি-র কিছু করার নেই। তবে বিষয়টি তাঁরা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগকে জানিয়েছেন বলে ওই কর্তার দাবি।

এ দিকে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের একাদশ, দ্বাদশের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া চলছে। কিছু দিন আগে বাংলা, ইংরেজির ইন্টারভিউ পর্ব শেষ হয়েছে। ভূগোল, পদার্থবিদ্যা এবং জীববিদ্যার প্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ের নোটিস দেওয়া হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

School service commission West Bengal School Service Commission Physical Disabilities

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy