Advertisement
E-Paper

সখ্য শিকেয়, দ্বন্দ্ব জারি নিচুতলায়

সখ্য থমকে রইল বোলপুরে শাসকদলের দলীয় কার্যালয়েই। বীরভূম জেলা তৃণমূলের যুযুধান দুই পক্ষ—কাজল শেখ এবং অনুব্রত মণ্ডল তাঁদের পুরনো বিবাদ ভুলে হাতে হাত মিলিয়ে ছিলেন শনিবার বিকেলে। পুরনো ‘মালিন্য’ যে মুছে গিয়েছে দুই নেতাই হাসিমুখে তা মেনে নিয়েছিলেন। যা দেখে দলীয় নেতা-কর্মীদেরই একাংশ আড়ালে চিমটি কেটেছিলেন, ‘সাপে-নেউলে কি মিলমিশ হয়!’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৯
বাহিরী গ্রামের রাস্তায় অবাধে চলছে দুষ্কৃতীদের বোমার লড়াই।

বাহিরী গ্রামের রাস্তায় অবাধে চলছে দুষ্কৃতীদের বোমার লড়াই।

সখ্য থমকে রইল বোলপুরে শাসকদলের দলীয় কার্যালয়েই।
বীরভূম জেলা তৃণমূলের যুযুধান দুই পক্ষ—কাজল শেখ এবং অনুব্রত মণ্ডল তাঁদের পুরনো বিবাদ ভুলে হাতে হাত মিলিয়ে ছিলেন শনিবার বিকেলে। পুরনো ‘মালিন্য’ যে মুছে গিয়েছে দুই নেতাই হাসিমুখে তা মেনে নিয়েছিলেন। যা দেখে দলীয় নেতা-কর্মীদেরই একাংশ আড়ালে চিমটি কেটেছিলেন, ‘সাপে-নেউলে কি মিলমিশ হয়!’
সেই প্রবাদে কার্যত সিলমোহর পড়ে গেল সোমবার। এ দিন, জেলা সভাপতি অনুব্রতর খাসতালুক বোলপুরের লাগোয়া বাহিরী গ্রামে সকাল থেকে শুরু হয় দু’পক্ষের এলাকা দখলের লড়াই। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সকালের সেই হাতাহাতি দুপুরের মধ্যেই বোমাবাজিতে গড়ায়। অভিযোগ, চলে গুলিও। ঘণ্টা খানেকের বোমা-গুলির লড়াইয়ে আহতও হয়েছেন দু’পক্ষের অন্তত দু’জন। দলীয় সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় দুই গোষ্ঠীর ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন দীর্ঘ দিনের কাজল-ঘনিষ্ঠ অঙ্কুর চৌধুরী-সহ ৬ জন। বাহিরী দলীয় কার্যালয়ের পাশের মাঠ থেকে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশ জানিয়েছে। অনুব্রত গোষ্ঠীর উত্তম দাস-সহ পাঁচ জনকে লাগোয়া গ্রাম থেকে আটক করেছে পুলিশ। ওই গ্রামে বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে পুলিশি প্রহরাও।
২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন—কোনও ভাবেই ‘বরদাস্ত করা হবে না দলীয় বিশৃঙ্খলা’। সেই বার্তা পেয়েই শনিবার তাঁদের পুরনো বিবাদ মুছে বোলপুরের দলীয় কার্যালয়ে বসেছিলেন অনুব্রত-কাজল।
রবিবারই জেলার প্রতিটি স্তরের নেতৃত্বকে ডেকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল, কোন্দল মিটিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার। কিন্তু এ দিন সকাল থেকেই বাহিরীর ওই দলীয় কার্যালয়ের দখলদারি নিয়ে শুরু হয় দু-পক্ষের গণ্ডগোল।

তবে ওই কোন্দল নিয়ে নিবির্কার কাজল শেখ। এ দিন বিকেলে তিনি বলেন, ‘‘কোনও গোষ্ঠী কোন্দল নেই। বাহিরীতে বিজেপি হামলা করেছিল। বোমা-গুলি নিয়ে পার্টি অফিস দখল করতে গেলে, এলাকার মানুষ রুখে দিয়েছে।’’ তিনি জানান, ‘‘ঘটনার সময় আমি তো জেলা সভাপতির বাড়িতেই ছিলাম। ফোনে গোলমালের খবর জানতে পেরেই উনি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।’’ তাহলে কাজল-অনুগামীদের গ্রেফতার করা হল কেন? জবাব মেলেনি। তবে এ দিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি অনুব্রতর সঙ্গে। বিজেপিও কাজলের দাবি অস্বীকার করেছে।

স্কুলের পিছনেই তুমুল বোমা-গুলির লড়াই চলছে। আতঙ্কে ক্লাসঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে পড়ুয়ারা।

রবিবার বিকালেই তোলাবাজি বন্ধ করার ও দলীয় কোন্দল মিটিয়ে এক সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে কাজ করার জন্য বুথ স্তরের নেতা থেকে শুরু করে জেলার সব স্তরের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। ঘটনা হল, অনুব্রতর খাসতালুক বোলপুর হলেও সংলগ্ন এলাকা বাহিরীতে শাসক দলের কাজল গোষ্ঠীর প্রভাব ছিল বরাবরেরই। বাহিরী পাঁচশোয়া পঞ্চায়েতের দখলও রয়েছে কাজল গোষ্ঠীর হাতে। স্থানীয় সূত্রে খবর, নিজেদের দখল কায়েম করতে অনুব্রত-অনুগামীরা অতীতেও বার কয়েক

ভাঙচুর পার্টি অফিসে। (ইনেসেটে) পড়ে রয়েছে বোমা।

হামলা করেছে ওই এলাকায়। এতে দু’দলের সংঘর্ষ বেধেছে ওই পঞ্চায়েতের একাধিক এলাকায়। সোমবার সকালে বোলপুর–নতুনহাট সড়কে সে গণ্ডগোলই আরও এক বার দেখলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ দিন বাহিরী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বোলপুর-পালিতপুর বাস রাস্তার উপর অজস্র বোমার দাগ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বোমার সুতলী। সংলগ্ন স্কুলের মাঠে পড়ে রয়েছে কার্তুজের খোল। স্থানীয়রা বলেন, প্রথমে বোমা ছুঁড়তে ছুঁড়তে এবং গুলি চালিয়ে গ্রাম ঢোকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত অনুগামীর দল। তাদের পাল্টা দিতে গ্রামের দিক থেকে বোমা এবং গুলি ছুঁড়তে শুরু করে কাজল গোষ্ঠীর লোকজন। উভয় পক্ষের মধ্যে সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বোমা এবং গুলির লড়াই। বাহিরী দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, পড়ে রয়েছে শাসক দলের পতাকা, তছনছ ভাঙা চেয়ার। সামনের জমিতে রক্তের দাগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘অনুব্রত গোষ্ঠীর এক জন এই ঘটনায় গুলি বিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। গুলি বিদ্ধ হয়েছে আর দু’জন।’’

বাস রাস্তার অদূরে বাহিরী ব্রজসুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়। জানা যায়, উভয় পক্ষের বোমা গুলির লড়াই চলার সময়ে সাময়িক ভাবে ওই বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। বিদ্যালয়ের মাইকে ঘোষণা করা হয়, ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসরুমে যেতে। সংঘর্ষ থামলে, অবশ্য ফের ক্লাস শুরু হয়। এ দিন, বাহিরী পঞ্চায়েত দফতর লাগোয়া এলাকায় থাকা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের পাশ থেকেই উদ্ধার হয় ব্যাগ ভর্তি বোমা। এলাকার বাসিন্দা তথা কাজল শেখ গোষ্ঠীর অঙ্কুর চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘এলাকা দখলের জন্য উত্তম দাসের নেতৃত্ব বহিরাগত দুষ্কৃতীরা গ্রামে ঢোকে। আমাদের দলীয় কার্যালয়ের পাশে বোমবাজি করে এবং কার্যালয়ে ভাঙচুর করে। গ্রামবাসীরা রুখে দাঁড়ানোয়, কিছুক্ষণ তাণ্ডব চালিয়ে পালিয়ে যায়।’’

উত্তম অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘ওই এলাকায় অশান্তি জিইয়ে রাখার চেষ্টা করেছে অঙ্কুর এবং তার দলবল। এ দিন বোমাবাজি করে গুলি ছুড়েছে তারাই। এক জন মারাও গিয়েছে বলে খবর পেয়েছি।’’

ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

Bahiri Group clash party office Kajal shek bolpur Birbhum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy