Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Gujarat Assembly Election 2022

বাংলার বামফ্রন্টের নজির ছুঁয়েও ছোঁয়া হল না গুজরাত বিজেপির

বাংলায় বামফ্রন্ট, আর গুজরাতে বিজেপি— পর পর সাত বার জয়ের নজির এই দুই রাজ্যেই রয়েছে একমাত্র। তবে ক্ষমতায় থাকার সময়সীমায় গুজরাতকে হারিয়ে সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবে এগিয়ে থাকবে সেই বাংলাই।

বিজেপির হাতে পর পর সাত বার যাওয়া গুজরাত কিন্তু বাংলায় বামফ্রন্টের নজির ছুঁয়েও ছুঁতে পারল না। বাঁ দিক থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, জ্যোতি বসু, কেশুভাই পটেল এবং নরেন্দ্র মোদী।

বিজেপির হাতে পর পর সাত বার যাওয়া গুজরাত কিন্তু বাংলায় বামফ্রন্টের নজির ছুঁয়েও ছুঁতে পারল না। বাঁ দিক থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, জ্যোতি বসু, কেশুভাই পটেল এবং নরেন্দ্র মোদী। নিজস্ব চিত্র।

অমিত রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৫১
Share: Save:

এক-দু’বার নয়, সাত-সাত বার। এই নিয়ে পর পর সাত বার গুজরাতে জয় পেল বিজেপি। এমন নজির গোটা দেশে নেই, একমাত্র বাংলা ছাড়া। এ রাজ্যে ১৯৭৭ সালে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার প্রথম বার ক্ষমতায় আসে। তার পর টানা সাত বার। ২০০৬ সাল পর্যন্ত। গুজরাতেও জনতার রায় পর পর সাত বার বিজেপির পক্ষেই গেল। ১৯৯৫ সালে প্রথম বার সে রাজ্যে একক ভাবে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। ২০২২ সালের ভোটের ফলও জানিয়ে দিল, এ বারও তারা সরকার গড়বে। বাংলা ছাড়া আর কোথাও এমনটা ঘটেনি। তবে বিজেপির হাতে পর পর সাত বার যাওয়া গুজরাত কিন্তু বাংলায় বামফ্রন্টের নজির ছুঁয়েও ছুঁতে পারল না। সামান্য হলেও দূরত্ব রয়ে গেল।

এ রাজ্যে ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। বাংলায় বামেদের সেই বিজয়কেতন উড়েছিল সব মিলিয়ে ৩৪ বছর। পর পর সাত বার জিতে তারা ৩৪ বছর রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু একই সংখ্যক বার গুজরাতে জয় পেলেও বিজেপি কিন্তু ৩৪ বছর সে রাজ্যের ক্ষমতায় থাকবে না। সব কিছু ঠিক থাকলে, ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে যখন গেরুয়া শিবির আবার সে রাজ্যের বিধানসভা ভোটে অংশ নেবে, তখন তাদের সরকারের বয়স হবে ৩২ বছরের একটু বেশি। ১৯৯৫ সালে গুজরাতে বিজেপি একক ভাবে প্রথম বার সরকার গড়লেও, ১৯৯৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৮ সালের ৪ মার্চ পর্যন্ত তাদের সরকারের বাইরে থাকতে হয়েছিল। প্রায় দেড় বছর সরকারের বাইরে থাকায় সাত বারের বিজেপি-পরিচালিত সরকারের বয়স শেষ পর্যন্ত হতে পারে ৩২ বছর। তাই সমসংখ্যক বার জয় পেয়েও বামেদের রেকর্ড ছোঁয়া হবে না বিজেপির।

১৯৯৫ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বিজেপির কেশুভাই পটেল। কিন্তু ৭ মাসের মাথায় তাঁকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয় সুরেশ মেহতাকে। এর পরে গুজরাতে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। একশো একুশ জন বিধায়ক থাকলেও বিদ্রোহের চাপে সে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদলেছে বার বার। ওই ৫ বছরে কেশুভাই ও সুরেশ ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন শঙ্করসিন বাঘেলা এবং দিলীপ পারিখ। শেষ ২ জন বিজেপি ছেড়ে রাষ্ট্রীয় জনতা পার্টি গড়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। দুই সরকারের মাঝে ২৭ দিন রাষ্ট্রপতি শাসনও ছিল পশ্চিম ভারতের এই রাজ্যে।

তবে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে ১৯৯৮ সাল থেকে। সে বার ১১৭ আসন পেয়েছিল বিজেপি। আবারও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কেশুভাই। তবে তিনি এ বারও ৫ বছর টিকতে পারেননি। সাড়ে তিন বছর পার হতে না হতেই তাঁকে সরিয়ে ২০০১ সালের অক্টোবরে মুখ্যমন্ত্রী করা হয় নরেন্দ্র মোদীকে। ২০০২ সালে ১২৭ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আবারও বিজেপি। ফের মুখ্যমন্ত্রী হলেন মোদী। ২০০৭ সালে ১০ আসন কমে জয় মেলে ১১৭ আসনে। এরও ৫ বছর পরে আরও দু’টি আসন কমে। বিজেপি ২০১২ সালে পায় ১১৫টি আসন। আর গত বিধানসভা নির্বাচনে অনেকটা কমে বিজেপির আসনসংখ্যা হয়ে যায় ৯৯। ষষ্ঠ বার গুজরাত জয়ে আসন কমলেও সপ্তম বার বিরোধী শিবিরকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে পদ্ম শিবির।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭৭ সালে প্রথম বার কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট। তার পর ১৯৮২, ১৯৮৭, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৬— ধারাবাহিক ভাবে জয় পেয়েছিল সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। এর মধ্যে ১৯৭৭ থেকে ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু। ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর নেতৃত্বেই ২০০১ ও ২০০৬ সালের বিরাট জয় পেয়েছিল বামফ্রন্ট।

বাংলায় বামফ্রন্ট, আর গুজরাতে বিজেপি— পর পর সাত বার জয়ের নজির এই দুই রাজ্যেই রয়েছে একমাত্র। তবে ক্ষমতায় থাকার সময়সীমায় গুজরাতকে হারিয়ে সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবে এগিয়ে রইল সেই বাংলাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP CPM Gujarat election 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE