Advertisement
E-Paper

নামমাত্র বৃষ্টিতে জল, শহর দুষছে রাজাকেই

চার রাতের সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল! ভরা বর্ষায় কী হবে? জল কোথায় গড়াবে? এখনই জলবন্দি হওয়ার আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছে হালিশহর। ৮.২৯ বর্গ কিলোমিটারের এই পুর এলাকায় বছর চারেক আগেও পুরসভার নিজস্ব ৬৪টা পুকুর ছিল। এ ছাড়াও সরকারি খতিয়ান অনুযায়ী জলাভূমি ছিল ২.১২ বর্গ কিলোমিটার। সেই সব নদী-জলাতেই বর্ষার জল নেমে যেত।

বিতান ভট্টাচার্য ও সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০৩:৫১
রাজা দত্ত

রাজা দত্ত

চার রাতের সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল!

ভরা বর্ষায় কী হবে? জল কোথায় গড়াবে? এখনই জলবন্দি হওয়ার আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছে হালিশহর।

৮.২৯ বর্গ কিলোমিটারের এই পুর এলাকায় বছর চারেক আগেও পুরসভার নিজস্ব ৬৪টা পুকুর ছিল। এ ছাড়াও সরকারি খতিয়ান অনুযায়ী জলাভূমি ছিল ২.১২ বর্গ কিলোমিটার। সেই সব নদী-জলাতেই বর্ষার জল নেমে যেত। প্রবল বৃষ্টিতেও শহর বেশিক্ষণ জলমগ্ন থাকত না। কিন্তু সে সব এখন ইতিহাস।

অধিকাংশ পুকুর-জলাই বছর চারেকের মধ্যে ভরাট হয়ে গিয়েছে। অনেক জায়গায় মাথা তুলেছে বহুতল। ফলে, বর্ষার জল কয়েক বছর ধরেই নামতে দেরি হচ্ছিল। এ বার গরমে এই চার দিনের সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় যে ভাবে জল জমল এবং নামতে সময় লাগল, তাতে সকলে উপ-পুরপ্রধান রাজা দত্তকেই দুষছেন। অভিযোগ, রাজা ও তার বাহিনী যে ভাবে পুকুর ভরাট করেছে, তাতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। তাই বৃষ্টিতে ডুবছে রাস্তা। প্রবীণ জয়দেববাবুর কথায়, ‘‘এ শহরে সব জলাই রাজার কৃপায় নির্জলা হয়েছে। বাম পুরবোর্ডের আমলেই ও শুরু করেছিল। পরিবর্তনের পর ক্ষমতা পেয়ে গতি বাড়িয়েছে।’’ আর এক বাসিন্দার ক্ষোভ, ‘‘রাজাকে থামাবে কে? পরিবেশ, জলবন্দি রাস্তাঘাট, জলভূমির প্রয়োজনীয়তা— এ সব রাজাকে কে বোঝাবে? ওর তো মুনাফা হলেই হল।’’

জনস্বার্থে ভূমি দফতরে করা একটি অভিযোগে রাজার এক চ্যালার কীর্তি উল্লেখ করা হয়েছে সম্প্রতি। তাতে বলা হয়েছে, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে দাগ নম্বর আর এস এবং এল আর ৫১৬, ৬২৩, ৬২৬, খতিয়ান নম্বর – এল আর – ৩৩৫ এর প্রায় আড়াই একর খাসজমিটি দখল করে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছে রাজ-বাহিনী।

তেঁতুলতলার একটি দু’বিঘার জলাজমি ভরাট নিয়ে বছর খানেক আগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছিল পুরসভা সিপিএমের হাতে থাকার সময়। তখনকার পুরপ্রধান এ বারের বীজপুর বিধানসভার জোটপ্রার্থী রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘খাসজমি হিসাবে চিহ্নিত ওই জলা নিয়ে জল গড়িয়েছিল অনেক দূর। আমাদের বোর্ড থাকাকালীনই তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসে। শাসকদলের জোর কতটা ছিল, তা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ২০১৪-র পুরবোর্ড ভেঙে সিপিএম কাউন্সিলরদের এলাকা ছাড়া করার ঘটনায় স্পষ্ট। ফলে, উচ্চ আদালতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জলা ভরাট হতে সময় লাগেনি।’’

ওই এলাকাতেই তৃণমূল কার্যালয়ের কাছেই একটি দশ কাঠার পুকুর ভরাট করা হয়েছে কিছুদিন আগেই। ঘটনাচক্রে, রাজা সেখান থেকেই নির্বাচিত পুর-প্রতিনিধি। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগ রাজার বিরুদ্ধেই। যথারীতি অভিযোগ অস্বীকার করেছে সে। দার্শনিকের মতো তার দাবি, ‘‘মাটির মানুষ আমি। মাটিতেই শুই। পুরসভা থেকে যে টাকা পাই তা গরিব মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দিই। আমার কোনও কিছুতেই মোহ নেই। আমি কেন জলা ভরাট করতে যাব?’’

তবে, শহরের নিকাশি সমস্যা যে তাঁর মাথাব্যথার কারণ তা মেনে নিয়েছেন পুরপ্রধান অংশুমান রায়। তিনি বলেন, ‘‘বর্ষা পুরোপুরি নামার আগে নিকাশি সমস্যা কী ভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।’’

পুরসভা কী করবে, তা সময় বলবে। কিন্তু তার জন্য বাসিন্দারা বসে থাকতে রাজি নন। নিচু খাসজমিগুলির বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য তাঁরা ইতিমধ্যেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে আবেদন জানিয়েছেন। সোমবার থেকেই আধিকারিকেরা হালিশহরের সরকারি জমির খতিয়ান মিলিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কোথায় কোথায় সরকারি জমি-পুকুর দখল হয়েছে, তার তালিকা তৈরি হচ্ছে। তার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আপাতত এটাই আশার আলো শহরবাসীর কাছে।

Halisahar Raja Dutta water logging
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy