Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শীত এ বার বিদায়ের মুখে? হাওয়ার বার্তা তেমনটাই

ক্যালেন্ডারে মাঘ, কিন্তু আকাশে কার্যত আষাঢ়!বাঘা শীত তো দূরের কথা, উত্তুরে হাওয়া নেই। ঠান্ডার বদলে গরম-গরম ভাব। বিতিকিচ্ছিরি আবহাওয়ার দোসর হয়েছে টিপটিপে বৃষ্টি। শুক্রবার দিনভর রাজ্য জুড়ে এমন আবহাওয়া দেখে আমজনতার প্রশ্ন, তা হলে কি শীত এ বার বিদায়ের মুখে?

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩০
Share: Save:

ক্যালেন্ডারে মাঘ, কিন্তু আকাশে কার্যত আষাঢ়!

বাঘা শীত তো দূরের কথা, উত্তুরে হাওয়া নেই। ঠান্ডার বদলে গরম-গরম ভাব। বিতিকিচ্ছিরি আবহাওয়ার দোসর হয়েছে টিপটিপে বৃষ্টি। শুক্রবার দিনভর রাজ্য জুড়ে এমন আবহাওয়া দেখে আমজনতার প্রশ্ন, তা হলে কি শীত এ বার বিদায়ের মুখে?

হাওয়ার বার্তা তেমনটাই। আর আলিপুর হাওয়া অফিসের কাছ থেকেও তেমনই ইঙ্গিত মিলছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আজ, শনিবার থেকে তাপমাত্রা সাময়িক ভাবে নামবে। কাল, রবিবার এক ধাক্কায় তাপমাত্রা কমে যেতে পারে ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু তা স্থায়ী হবে না। চলতি মাসের শেষ দিন থেকেই ধীরে ধীরে শুরু হয়ে যাবে পারদের ঊর্ধ্বগতি। ভরা মাঘে গাঙ্গেয় বঙ্গে যে-উত্তুরে হাওয়ার দাপট থাকার কথা, দেখা মিলবে না তার।

‘‘জানুয়ারির শেষেই কলকাতা থেকে বিদায় নেবে শীত। তবে জেলাগুলিতে আরও কিছু দিন ঠান্ডা থাকবে,’’ বলছেন সঞ্জীববাবু। কেন? আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, কলকাতার তুলনায় সাধারণ ভাবে জেলাগুলিতে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে। ফলে আগামী কয়েক দিন জোরালো ঠান্ডা মালুম হবে সেখানে। জানুয়ারির শেষ দিন থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলেও জেলায় গরমের অনুভূতি মিলতে কিছুটা সময় বেশি লাগবে।

এ বছর মাঘ-পয়লাই ছিল মরসুমের শীতলতম দিন। সে-দিন মহানগরের তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছিল পুরুলিয়া, বীরভূম এবং উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স। সেখানে এ দিন কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮.২ ডিগ্রি! শ্রীনিকেতন, বাঁকুড়া, আসানসোলের মতো এলাকাতেও রাতের তাপমাত্রা ১৬-১৭ ডিগ্রির কাছে ছিল। তরাই-ডুয়ার্সে রাতের তাপমাত্রা দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় কম হলেও তা চলতি সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার উপরেই রয়েছে।

চড়ছে পারদ

কোথায় কত∗

• কলকাতা ১৮.২ (+৪)

• শ্রীনিকেতন ১৬.৫ (+৪)

• বাঁকুড়া ১৭.০ (+৪)

• বর্ধমান ১৭.০ (+৪)

• জলপাইগুড়ি ১৩.৭ (+৩)

∗ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বন্ধনীতে স্বাভাবিকের কত বেশি।

ভরা মাঘে শীতের এই দশা কেন?

শীতের এই অকাল-বিদায়ের জন্য পশ্চিমি ঝঞ্ঝা এবং ঘূর্ণাবর্তের যৌথ আবির্ভাবকেই দায়ী করছে হাওয়া অফিস। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশের উপর দিয়ে একটি পশ্চিমি ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা, ভারী হাওয়া) বয়ে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশের উপরে রয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। তার প্রভাবেই পশ্চিমবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢুকেছে। সেই জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে তৈরি করছে মেঘ। এবং তার ফলেই উত্তুরে হাওয়া আটকে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে গুমোট আবহাওয়া। পুরো ব্যাপারটাই শীতের স্বভাববিরুদ্ধ। শীতকালে সাধারণ ভাবে আকাশ মেঘমুক্ত থাকে। ফলে দিনে ঝকঝকে রোদ পাওয়া যায়। মাটি গরম হয়। রাত হলেই সেই তাপ দ্রুত বিকিরিত হয়ে ঠান্ডা হয় মাটি। তার সঙ্গে উত্তুরে হাওয়ার যুগলবন্দিতে কনকনে ঠান্ডা প়ড়ে।

কিন্তু শীতের সেই স্বাভাবিকতা এ বার ধাক্কা খেযেছে পদে পদে। সূচনা পর্বে দফায় দফায় ঘূর্ণাবর্ত, ঘূর্ণিঝড় তার রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছিল। তার পরেও মাথা তোলার চেষ্টা করেছিল ঠান্ডা। কিন্তু তিন-চার দিন কিছু চার-ছয় মারা ছাড়া তার ব্যাট বিশেষ সুবিধে করতে পারেনি। মাঘে পৌঁছে সে যে ঘুরে দাঁড়াবে, সেই পথও কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা আর ঘূর্ণাবর্ত। হিমাচলে যতই বরফ পড়ুক, ঝঞ্ঝা আর ঘূর্ণাবর্তের জোড়া বাউন্সার সামলানো তার পক্ষে আর সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা। সব মিলিয়ে মাঝ-মাঘেই শীতের বিদায়ের ঘণ্টা শুনছে আবহাওয়া দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Winter Cold
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE