Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তল্লাশিতে ঘুষ চাওয়ার নালিশ, ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট

ফের আদালতের তোপের মুখে পুলিশ! কলকাতা হাইকোর্টে বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার একটি মামলায় তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযুক্তের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তল্লাশি করতে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২১
Share: Save:

ফের আদালতের তোপের মুখে পুলিশ!

কলকাতা হাইকোর্টে বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার একটি মামলায় তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযুক্তের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তল্লাশি করতে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া মঙ্গলবার জানিয়ে দেন, রাজ্য পুলিশের উপরে আস্থা না-রেখে এই মামলার তদন্তভার সিবিআই বা অন্য কোনও সংস্থাকে দেওয়া উচিত।

কলকাতার শরৎ বসু রোডের একটি বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে আমানতকারীদের প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ওই সংস্থা বিভিন্ন প্রকল্পে জলপাইগুড়ি জেলা থেকে ৩০ কোটি এবং দুর্গাপুর থেকে ২৫ কোটি টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ। গত নভেম্বরের শেষে জলপাইগুড়ির বীরপাড়া থানা এলাকার কয়েক জন আমানতকারী ওই সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করতে থানায় যান। কিন্তু পুলিশ তখন তাঁদের বক্তব্য শোনেইনি বলে অভিযোগ।

আমানতকারীদের আইনজীবী অর্ণব সাহা এ দিন জানান, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হতেই বীরপাড়া থানার পুলিশ ওই লগ্নি সংস্থার কর্ণধার রাজীব মুখোপাধ্যায়, এজেন্ট সাম্য দে এবং কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তদন্তে নামে। গত ৯ অগস্ট গ্রেফতার করা হয় সাম্যকে। কিন্তু পরের দিন পুলিশ তাঁকে আদালতে হাজির করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তদন্তের আবেদন জানায়নি। ফলে সাম্য জামিন পেয়ে যান। তার কয়েক দিন পরে শুভদীপ পাল নামে এক এজেন্ট তথা আমানতকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুভদীপকে অবশ্য পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নেয়।

অর্ণববাবু এ দিন হাইকোর্টে অভিযোগ জানান, সংস্থার কর্ণধারের কলকাতার বাড়ি ও কার্যালয়ে তল্লাশি করতে যাওয়ার জন্য তদন্তকারী পুলিশ অফিসার ধৃত এজেন্ট শুভদীপের কাছ থেকেই পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেন। তদন্তকারী ঘুষ নিয়েছেন শুনেই বিচারপতি পাথেরিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, “তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে খোলাখুলি ঘুষ নেওয়া অভিযোগ উঠেছে! এই অবস্থায় মামলাটির তদন্ত সিবিআই বা প্রতারণা দমনের অন্য কোনও সংস্থাকে দিয়ে করানোই উচিত হবে।”

সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান, এই ব্যাপারে সরকারের কী বক্তব্য, সেটা তাঁকে জানতে হবে। বিচারপতি জানান, কাল, বৃহস্পতিবার তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন।

মেয়াদ শেষে টাকা না-দেওয়ার অভিযোগে এ দিনই একটি অর্থ লগ্নি সংস্থার অফিসে চড়াও হন বেশ কিছু আমানতকারী এবং এজেন্ট। সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টে পর্যন্ত মৌলালিতে ওই অর্থ লগ্নি সংস্থার সদর দফতরে বিক্ষোভ চলে। আমানতকারীদের অভিযোগ, মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। তা সত্ত্বেও টাকা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। নগদ টাকার বিনিময়ে কখনও জমি বা সোনা কিংবা জামাকাপড়ের দোকান দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ওই সংস্থার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা-ও দেওয়া হয়নি।

সংস্থার কর্তৃপক্ষ অবশ্য কোনও অভিযোগই মানতে চাননি। তাঁদের তরফে জানানো হয়, সম্প্রতি সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির প্রকাশ্যে আসায় আমানতকারীদের মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। তাই তাঁরা এমন অভিযোগ করছেন। আমানতকারীদের প্রাপ্য টাকা সময়মতোই দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE