Advertisement
১৯ মে ২০২৪

চিকিৎসক বিদায়ে বন্ধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র

প্রত্যন্ত এলাকায় শহুরে চিকিৎসকেরা আসতে চান না! বর্ধমানের মেমারির আব্দুল কাদের সরকার অবশ্য এই দলে পড়েন না। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি পান্ডুয়ার বৈঁচিতে বিলসরা গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা দিয়ে গিয়েছেন।

সংবর্ধনা: কর্মজীবনের শেষ দিনে চিকিৎসক আব্দুল কাদের সরকার। নিজস্ব চিত্র

সংবর্ধনা: কর্মজীবনের শেষ দিনে চিকিৎসক আব্দুল কাদের সরকার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০১:১৩
Share: Save:

প্রত্যন্ত এলাকায় শহুরে চিকিৎসকেরা আসতে চান না! বর্ধমানের মেমারির আব্দুল কাদের সরকার অবশ্য এই দলে পড়েন না। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি পান্ডুয়ার বৈঁচিতে বিলসরা গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা দিয়ে গিয়েছেন। অবসর নিলেন শুক্রবার। গ্রামবাসী তাঁকে চোখের জলে বিদায় দিলেন।

তাঁর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে তালা পড়ে গেল ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। গ্রামবাসীরা জানান, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জনই চিকিৎসক ছিলেন। তাঁর পরিবর্তে এখনও সেখানে কোনও চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়নি। ফলে, ১৯৬১ সালে তৈরি চিকিৎসাকেন্দ্রটি শনিবার থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

এমবিবিএস পাশ করেই ১৯৮৫ সালে বৈঁচির এই গ্রামের যতীন্দ্র দাতব্য চিকিৎসালয়ে যোগ দেন আব্দুল কাদের। তার পর থেকেই গ্রামেরই একজন হয়ে যান ‘ডাক্তারবাবু’। প্রায় পঁচিশটি গ্রামের গরিব মানুষের ভরসা হয়ে ওঠেন তিনি। মাঝে দু’বার বদলির আদেশ এসেছিল। কিন্তু গ্রামবাসীরা তাঁকে ছাড়তে চাননি। তাঁদের বিক্ষোভে বদলির আদেশও রদ হয়ে গিয়েছিল।

এ দিন প্রিয় ডাক্তারবাবুর অবসরের দিনে কয়েকশো মানুষ ভিড় জমালেন হাসপাতালের সামনে। অনেকেই কেঁদে ফেললেন। মাইক বাজিয়ে, প্যান্ডেল করে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হল তাঁকে। গ্রামবাসীদের তরফে রবীন্দ্র রচনাবলী, কোরান উপহার পেলেন। কেউ তাঁর পকেটে গুঁজে দিলেন কলম, কেউ বা হাতে দিলেন জামা, ছাতা থেকে লজেন্স।

প্রণব ঘোষ নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু আমাদের কাছে ভগবান ছিলেন। রোদ, ঝড়-জলেও তিনি ঘরে বসে থাকতেন না। শুধু চিকিৎসা করাই নয়, বিনা পয়সায় ওষুধও দিতেন।’’ সন্তোষী চক্রবর্তী নামে এক বধূর কথায়, ‘‘এমন চিকিৎসক পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। হাসপাতালের ছাদ দিয়ে জল পড়লে পাশের বাড়িতে গিয়ে টেবিল পেতে চিকিৎসা করতে দেখেছি। ওঁকে ছাড়তে মন চাইছে না।’’

গ্রামবাসীদের ভালবাসায় আপ্লুত ডাক্তারবাবুও। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এক জন চিকিৎসক হিসেবে যা করা উচিত, তার থেকে বেশি কিছু করিনি। আশা করব আমার পরে যিনি আসবেন, তিনিও একই রকম ভাবে পরিষেবা দেবেন।’’

গ্রামবাসীদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসক নিয়োগ করা হোক। এ ব্যাপারে হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহবুব রহমান বলেন, ‘‘চিকিৎসকের জন্য গ্রামবাসীরা বিডিও বা পঞ্চায়েত স্তরে আবেদন করতে পারেন। তার পরে বিষয়টি আমাদের কাছে এলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Center Doctor Retirement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE