স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে প্রায়ই ভোগান্তির অভিযোগ তোলেন সাধারণ মানুষ। কখনও হাসপাতালে চিকিৎসা বাবদ যে বিল হয়, তার থেকে অনেকটা কম টাকা মেলে বিমা সংস্থার কাছ থেকে। কখনও আবার ক্যাশলেস সুবিধা থাকলেও তা কার্যকর হয় না। ফলে, নগদে চিকিৎসা করাতে হয় রোগীর পরিবারকে। স্বাস্থ্য বিমা প্রদানকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের এমনই নানা অভিযোগের সমাধান করতে এ বার পদক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার। আগামী ২১ এপ্রিল আলিপুরের ধনধান্য সভাগৃহে স্বাস্থ্য বিমা সংস্থাগুলিকে নিয়ে বৈঠকে বসবে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন।
সূত্রের খবর, গ্রাহকদের বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়গুলি নিয়ে বিশদে ওই বৈঠকে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি, তারাও কিছু সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিমা সংস্থাগুলি। ওই বৈঠকে তা নিয়েও আলোচনা হবে। জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে এক-দু’টি বিমা সংস্থা কিছু সমস্যা নিয়ে কমিশনের কাছে এসেছিল। তাতে অভিযোগ করা হয়, হাসপাতালের একাংশ ভুয়ো বিল বানিয়ে বিমার টাকা তুলে নিচ্ছে। এর পরে কমিশনের তরফে জানানো হয়, আলাদা ভাবে নয়, সমস্ত সংস্থাকে সঙ্গে নিয়েই একটি বৈঠকের প্রয়োজন রয়েছে। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে কমিশনের তরফে ১১টি বিমা সংস্থার কর্তৃপক্ষকে ডাকা হয়েছে। তার মধ্যে ৪টি সরকারি বিমা সংস্থা রয়েছে। বৈঠকে কমিশনের চেয়ারম্যান-সহ উপস্থিত থাকবেন অন্য আধিকারিকেরাও।
বহু ক্ষেত্রেই গ্রাহকেরা অভিযোগ করেন, কয়েক বছর ধরে প্রিমিয়াম দেওয়ার পরেও বিমার সুবিধা নেওয়ার সময়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। বিমা করানোর সময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি অনেকাংশেই বাস্তবায়িত হয় না বলে অভিযোগ। অথচ সরকারি বা বেসরকারি, উভয় ক্ষেত্রেই বিমার প্রিমিয়ামের অঙ্ক বাড়তে থাকে। এমনও অভিযোগ, ক্যাশলেস বিমা করানোর পরেও হাসপাতালে ভর্তির সময়ে সেই সুবিধা মেলে না। অগত্যা অনেকেই ধারদেনা করে চিকিৎসা করিয়ে তার পরে সেই বিল জমা করেন বিমা সংস্থার কাছে। সেই টাকা পেতেও অনেক সময় লেগে যায়।
অনেক ক্ষেত্রে আবার ক্যাশলেস বিমা আছে জানতে পেরে বেসরকারি হাসপাতালের একাংশ বেশি টাকার বিল করে। তাতে বিমার মোট টাকার অঙ্ক কমে যায়। আরও অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে ছুটির কথা বলা হলেও বিমা সংস্থার ছাড়পত্র না মেলা পর্যন্ত রোগীকে ছাড়া হয় না। ফলে চিকিৎসক ছুটি দিয়ে দিতে বললেও অতিরিক্ত সময় বা দিন রোগীকে হাসপাতালেই থেকে যেতে হয়।
তাই স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের কারণ অনুসন্ধান করা এবং সমাধানের পথ বার করাই ওই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সমস্যার সমাধানের পথ বার করার পাশাপাশি, যে সমস্ত বিষয়ে খামতি রয়েছে, তা ঠিক করার জন্যও কিছু পরামর্শ দেওয়া হবে সংস্থাগুলিকে। একই ভাবে তাঁরাও যে সমস্যার কথা বলছেন, সেটিরও কী ভাবে সমাধান করা যায়, তা আলোচনা করা হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)