Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Leprosy

কুষ্ঠ-যুদ্ধে ‘সাফল্যে’ সন্দেহ স্বাস্থ্যকর্তার!

‘সচেতনতা অভিযান সপ্তাহ’ শেষে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ভবনে একটি সভার আয়োজন করেছিল কুষ্ঠ বিভাগ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৩৪
Share: Save:

রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কুষ্ঠ বিভাগ নিজেদের কাজকর্মে সাফল্যের দাবি করছে। আর সেই পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তাই!

‘সচেতনতা অভিযান সপ্তাহ’ শেষে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ভবনে একটি সভার আয়োজন করেছিল কুষ্ঠ বিভাগ। সভায় স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর উপস্থিতিতে রাজ্য কুষ্ঠ আধিকারিক অমিত হালদার জানান, নতুন কুষ্ঠরোগী চিহ্নিতকরণ, ‘প্রিভ্যালেন্স রেট’ বা কুষ্ঠের হার এবং ‘গ্রেড টু ডিফরমিটি’— প্রতিটি মাপকাঠিতেই দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। দুই শীর্ষ কর্তা প্রশ্ন তোলেন, যদি এই তথ্য সত্যি হয়, শিশু কুষ্ঠরোগীর সংখ্যা বাড়ছে কেন?

কুষ্ঠ আধিকারিক জানান, প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় কুষ্ঠরোগীর সংখ্যা দশের কম রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে কেন্দ্র। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে এই মাপকাঠিতে রাজ্যে কুষ্ঠরোগীর হার ৬.৬৮। দশ হাজার জনসংখ্যায় প্রিভ্যালেন্স রেট একের নীচে রাখতে বলেছে কেন্দ্র। এ রাজ্যে তা ০.৬২। কিন্তু শিশুদের মধ্যে কুষ্ঠ ২০১৮-১৯ সালের তুলনায় বেড়েছে। ২০১৮-১৯ সালে যা ছিল ৮.৫৯, তা এখন ৯.০২।

এখানেই তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘কুষ্ঠ নিয়ে বছরে এক বা দু’বার আমরা আলোচনা করি। আর তাতেই দেখছি, কুষ্ঠ নির্মূল কর্মসূচি তরতর করে উন্নতি করছে! যদি সত্যিই তা হত, তা হলে শিশুদের মধ্যে কুষ্ঠরোগী খুঁজে পাওয়া যেত না!’’ তিনি জানান, কুষ্ঠরোগীর খোঁজ কী ভাবে হচ্ছে, তার উপরে পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ভর করে। শিশুদের মধ্যে কুষ্ঠরোগী পাওয়া যাচ্ছে মানে ‘অ্যাকটিভ ট্রান্সমিশন’ হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, ‘‘অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল বলে হয়তো খানিকটা কাজ করতে পেরেছি। তবে তার মানে এই নয় যে, সাংঘাতিক ভাল করেছি।’’

একই সুরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানান, কুষ্ঠ বংশগত রোগ নয়। তা হলে শিশুরা কী ভাবে কুষ্ঠের শিকার হচ্ছে? সমাজের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে এই রোগের কারণ লুকিয়ে রয়েছে বলে তাঁর অভিমত। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এ ভাবে কুষ্ঠ নির্মূল করার কাজ চলতে থাকলে তথ্য-পরিসংখ্যান দেখাবে, রোগ কমছে। কিন্তু কুষ্ঠ নির্মূল হবে না।’’ আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনও জায়গা নেই বলে দফতরের আধিকারিকদের সতর্ক করে দেন তিনি।

স্বাস্থ্য দফতরের দুই শীর্ষ কর্তার বক্তব্য নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করে জাতীয় কুষ্ঠ নির্মূল কর্মসূচির পরামর্শদাতা চিকিৎসক প্রসূন মিত্র জানান, গ্রামীণ মডেলে শহরাঞ্চলে সবে কাজ শুরু হয়েছে। তিনি জানান, শহরাঞ্চলের কাজ গতি পেলে সারা দেশের নিরিখে রাজ্যের পরিসংখ্যান আরও ভাল হবে। কুষ্ঠ নিয়ে সন্তোষজনক জায়গায় পৌঁছতে হলে কিছু ক্ষেত্রে গবেষণার প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Leprosy Health Health Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE