অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগে ২০২৩ সালে প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। সেই রায় ডিভিশন বেঞ্চ বহাল রাখে কি না তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। সোমবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানিপর্বে চাকরিহারাদের একাংশের আইনজীবী প্রতীক ধর দাবি করেন, সরকারি দুর্নীতির কারণেই অনেক যোগ্যের চাকরি বাতিল হয়েছে।
ওই মামলায় ৬৩৫ জন সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে হাই কোর্টে আবেদন জানানো হয়। একক বেঞ্চ ১২ মে ২০২৩ অর্ডার দেয়। প্রতীক শুনানিতে বলেন, ‘‘কম সময়ে একক বেঞ্চ অর্ডার দিয়েছিল। আমরা ১০০০০ জন মতো প্রশিক্ষিত। নিয়োগের সময় অনেকের প্রশিক্ষণ ছিল না। প্রশিক্ষণ ছিল না বলে দুর্নীতির কারণে আমরাও বাতিল হয়ে গেলাম। নিয়োগের সময় আনট্রেন্ড ছিলাম। ১৯ এপ্রিল ২০১৯ এর পর থেকে আর আনট্রেন্ড (প্রশিক্ষণবিহীন) ছিলাম না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী। আবেদনকারীরাও প্রশিক্ষিত ছিলেন না। কিন্তু আমাদের কথা উল্লেখ করা হয়নি।’’
আরও পড়ুন:
ওই চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, সরকারি নীতি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিলের সময়সীমা মেনেই সময়ের তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। কিন্তু শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও তাঁদের বেঞ্চ একই শ্রেণিতে ফেলেছিল। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী প্রশ্ন করেন, ইন্টারভিউ ও অ্যাপটিটিউড টেস্ট কি সঠিক পদ্ধতিতে নেওয়া হয়েছিল? চাকরিহারাদের একাংশের আইনজীবী প্রতীক বলেন, ‘‘একক বেঞ্চ রায়ে কখনই অ্যাপটিটিউড টেস্টের সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়নি।’’ তাঁর দাবি, অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও আলাদা প্রশ্ন, নির্দিষ্ট গাইডলাইন ছিল না।’’ একক বেঞ্চ তার ধারণা অনুযায়ী রায় দিয়েছিল বলেও দাবি করেন প্রতীর। বলেন, ‘‘জেলাভিত্তিক নিয়োগের তালিকা দেখুন। আবেদনকারী ও শেষ নিয়োগভুক্তের নম্বর থেকেই দুর্নীতি যে হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না।’’ ১৮ জুলাই পরবর্তী শুনানি হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের মে মাসের ১২ তারিখ ওই মামলার রায় ঘোষণা করেন হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার ৪২৫০০ জন শিক্ষকের মধ্যে চাকরিচ্যুত হন প্রশিক্ষণহীন ৩২ হাজার শিক্ষক। প্রাক্তন বিচারপতির রায় ছিল, চাকরি বাতিল হলেও ওই শিক্ষকরা স্কুলে যাবেন। তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে রাজ্যকে। সেখানে যোগ্য এবং উত্তীর্ণদের চাকরি বহাল থাকবে। সিঙ্গল বেঞ্চের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায় পর্ষদ। তৎকালীন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। তবে একই সঙ্গে জানায়, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ মতো নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্ষদকে শুরু করতে হবে। হাই কোর্টের ওই দুই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য এবং পর্ষদ। সেখানে আবেদন জানান চাকরিহারাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, সিঙ্গল বেঞ্চ শুনানিতে সব পক্ষকে বলার সুযোগ দেয়নি। সব পক্ষের বক্তব্য শোনেনি আদালত। ওই বছর শীর্ষ আদালত হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চকে সব পক্ষের বক্তব্য শুনতে নির্দেশ দিয়েছিল।