Advertisement
E-Paper

২৬ হাজারের পরে এ বার প্রাথমিকের ৩২ হাজার চাকরি বাতিল, দু’বছর পরে মামলা শুনবে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ

২০১৪ সালের টেটের ভিত্তিতে দু’টি নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়। তার মধ্যে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে হাই কোর্টে মামলা করেন প্রিয়ঙ্কা নস্কর-সহ প্রায় ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী। ২০২২ সালে ওই মামলাগুলি দায়ের হয়।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৪৩
Share
Save

অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগে স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এ বার প্রাথমিকের ক্ষেত্রেও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে। এ ক্ষেত্রেও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। ২৬ হাজার চাকরি বাতিল আবহে সিঙ্গল বেঞ্চের রায় ডিভিশন বেঞ্চ বহাল রাখে কি না তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। সোমবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে ওই মামলার শুনানি রয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই মামলার শুনানি শুরু হবে।

২০১৪ সালের টেটের ভিত্তিতে দু’টি নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়। তার মধ্যে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে হাই কোর্টে মামলা করেন প্রিয়ঙ্কা নস্কর-সহ প্রায় ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী। ২০২২ সালে ওই মামলাগুলি দায়ের হয়। ২০২৩ সালের মে মাসের ১২ তারিখ ওই মামলার রায় ঘোষণা করেন হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার ৪২৫০০ জন শিক্ষকের মধ্যে চাকরিচ্যুত হন প্রশিক্ষণহীন ৩২ হাজার শিক্ষক। প্রাক্তন বিচারপতির রায় ছিল, চাকরি বাতিল হলেও ওই শিক্ষকরা স্কুলে যাবেন। তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে রাজ্যকে। সেখানে যোগ্য এবং উত্তীর্ণদের চাকরি বহাল থাকবে।

সিঙ্গল বেঞ্চের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায় পর্ষদ। তৎকালীন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। তবে একই সঙ্গে জানায়, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ মতো নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্ষদকে শুরু করতে হবে। হাই কোর্টের ওই দুই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য এবং পর্ষদ। সেখানে আবেদন জানান চাকরিহারাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, সিঙ্গল বেঞ্চ শুনানিতে সব পক্ষকে বলার সুযোগ দেয়নি। সব পক্ষের বক্তব্য শোনেনি আদালত। ওই বছর শীর্ষ আদালত হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চকে সব পক্ষের বক্তব্য শুনতে নির্দেশ দেয়। তার পর থেকে দু’বছর কেটে গেলেও ওই মামলার অগ্রগতি হয়নি। একাধিক বার বিচারপতির বেঞ্চ পরিবর্তন হলেও ওই মামলার শুনানি করা হয়নি। সম্প্রতি বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে’র ডিভিশন বেঞ্চে ওই মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিচারপতি সেন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ওই মামলা থেকে সরে দাঁড়ান। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশে মামলা যায় নতুন ডিভিশন বেঞ্চে। সোমবার সেখানেই এই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা।

২৬ হাজারের মতো প্রাথমিক মামলার পরিণামও একই হতে পারে বলে মনে করছেন মামলাকারীদের আইনজীবীরা। তাঁরা মনে করছেন এই মামলায় তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ই বহাল থাকবে। আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি বলেন, “এসএসসির থেকেও এই মামলায় অনেক বেশি দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতির নানা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায়।” তিনি জানান, প্রাথমিকের ওই নিয়োগে অ্যাপটিটিউড টেস্ট হয়নি, সংরক্ষণ নীতি মানা হয়নি, পর্ষদ পুরো প্যানেল প্রকাশ করেনি। এ ছাড়া বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। যার তদন্ত সিবিআই করছে। একই অবস্থান মামলার সঙ্গে যুক্ত আরেক আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের। তাঁর বক্তব্য, “নানা স্তরে দুর্নীতি হয়েছে। নম্বরের গোলমাল করে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব নয়।”

এসএসসি মামলার সঙ্গে প্রাথমিক মামলার সাদৃশ্য অনেকে খুঁজে পাচ্ছেন। ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, ওএমআর শিটের আসল কপি নেই। প্রাথমিকেও তাই। এখানেই ওএমআর শিট সংরক্ষিত নেই। পর্ষদ জানিয়েছে, আসল ওএমআর স্ক্যান করে তথ্য নথিভুক্ত করা রয়েছে। তবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আদালতে একাধিক বার সওয়াল হয়েছে। প্রাথমিকের এই নিয়োগে বেআইনি ভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে তদন্তে জানিয়েছে সিবিআই। এমতাবস্থায় ৩২ হাজার চাকরি বাতিল মামলার পরিণাম ডিভিশন বেঞ্চে ঝুলে রয়েছে।

Calcutta High Court Bengal SSC Recruitment Case

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy