Advertisement
০৭ মে ২০২৪
100 days work project

হাই কোর্টে ১০০ দিনের কাজ নিয়ে মামলা: রাজ্য বলল, আমাদের ভুল হতেই পারে, কেন্দ্র কী করছিল?

১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা সংক্রান্ত দু’টি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। এর মধ্যে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের এজলাসে শুনানি ছিল জনস্বার্থ মামলার।

কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের এজলাসে শুনানি ছিল জনস্বার্থ মামলার। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:০৭
Share: Save:

ছোটখাটো ভুল সব রাজ্যেই হয়ে থাকে। বাংলারও তেমন ভুল হয়ে থাকতে পারে। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে কলকাতা হাই কোর্টে এ কথা বলল খোদ রাজ্যই। তবে একই সঙ্গে তাদের প্রশ্ন, কেন্দ্র এ ব্যাপারে এত দিন কী করছিল? তাদের টেবিলে গত এক বছর ধরে কেন পড়ে ছিল রাজ্যের রিপোর্ট?

১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা সংক্রান্ত দু’টি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। এর মধ্যে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অন্য মামলাটি করেছিল পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজদুর সমিতি। তবে দু’টি জনস্বার্থ মামলার বিষয় ছিল ভিন্ন। শুভেন্দু জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগে। মজদুর সমিতি মামলা করেছিল পাওনার দাবিতে। সোমবার দু’টি মামলাই শুনানির জন্য ওঠে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানেই রাজ্য জানায়, ভুল যে হয় না, তা বলা যাবে না। তবে তারা এখন এ নিয়ে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেতে চাইছে না। কারণ, রাজ্য চায় যে কোনও মূল্যে বঞ্চিতরা তাঁদের প্রাপ্য টাকা পান।

রাজ্যের তরফে মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে হাজির ছিলেন, অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। কেন্দ্রের তরফে ছিলেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল (এএসজি) অশোককুমার চক্রবর্তী। কেন্দ্র অনিয়মের প্রসঙ্গ তোলায় রাজ্যের আইনজীবী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, কেন্দ্রের সঙ্গে লড়াই করা বাংলার লক্ষ্য নয়। রাজ্য সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য, বঞ্চিতদের ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা পাইয়ে দেওয়া। তাঁর কথায়, ‘‘এ নিয়ে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা চায় না রাজ্য। এটি একটি জনস্বার্থ মামলা। আমরা চাই রাজ্যের আসল উপভোক্তারা যেন প্রকল্পের সুবিধা পান। রাজ্য কখনও ভুল করে না এটা আমি বলব না। কিছু ভুল হতে পারে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অনেক রাজ্যের ক্ষেত্রেই হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাজ্য যে ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ পাঠিয়েছিল, তার কী হল?’’

১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকার দাবিতে এই অক্টোবরের শুরুতেই দিল্লি গিয়েছিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। দিল্লিতেই দু’দিনের ধর্না কর্মসূচি পালন করে তারা। পাল্টা জবাবে কেন্দ্র জানিয়েছিল, ১০০ দিনের কাজে অনেক অনিয়ম এবং দুর্নীতি হয়েছে, এ ব্যাপারে রাজ্যের কাছে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট বা কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তার রিপোর্ট চাওয়া হলেও তা তারা জমা দেয়নি। তাই টাকা বন্ধ করেছে কেন্দ্র। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টেও সেই প্রসঙ্গ উঠে আসে। রাজ্যের আইনজীবী প্রশ্ন করেন, ‘‘এক বছর ধরে কেন্দ্রের টেবিলে পড়ে রয়েছে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট। গত এক বছরে কেন তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানাল না কেন্দ্র? ভুল যে রাজ্যের হয় না, তা নয়। কিন্তু কেন্দ্র গত এক বছর ধরে কী করেছে, তার জবাবও দিতে হবে।’’

এই মামলায় কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে কেন্দ্রের এএসজি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তদন্তের বিস্তারিত রিপোর্ট বলছে, ১০০ দিনের কাজ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ৫৪ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। অথচ কোনও অডিট রিপোর্ট দেওয়া হয়নি।’’ তবে এক বছর ধরে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি কেন, তা জানতে চাওয়া হলে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সময় চায়।

আগামী সোমবার মামলাটির পরবর্তী শুনানি। ওই দিনই কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে হলফনামা দিতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত। তাদের জানাতে হবে, রাজ্য যে দ্বিতীয় 'অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট' পাঠিয়েছিল, তা নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE