Advertisement
E-Paper

মেঘ মরীচিকা, জ্বলুনিই সত্য

আশা জেগেছিল বৃহস্পতিবার অর্থাৎ নববর্ষের রাতে। সেই আশা জাগিয়েছিল ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ আর কিঞ্চিৎ ঠান্ডা বাতাস। এই দুই অনুকূল লক্ষণ দেখে কেউ কেউ ভেবেছিলেন, জ্বালা ধরানো গরম থেকে অবশেষে বুঝি রেহাই মিলতে চলেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২২
এমন গরমে শুধু এসি–র উপর ভরসা না করে, অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে৷ —নিজস্ব চিত্র।

এমন গরমে শুধু এসি–র উপর ভরসা না করে, অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে৷ —নিজস্ব চিত্র।

আশা জেগেছিল বৃহস্পতিবার অর্থাৎ নববর্ষের রাতে। সেই আশা জাগিয়েছিল ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ আর কিঞ্চিৎ ঠান্ডা বাতাস। এই দুই অনুকূল লক্ষণ দেখে কেউ কেউ ভেবেছিলেন, জ্বালা ধরানো গরম থেকে অবশেষে বুঝি রেহাই মিলতে চলেছে।

শুক্রবার সকাল হতেই অবশ্য বোঝা গেল, সেটা আশা নয়, মরীচিকা। স্বস্তি দূরের কথা, গরম বাতাসের শুকনো ভাবটাই আরও জাঁকিয়ে বসেছে! যার জেরে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি ফিরে এসেছে কলকাতায়। কাগজে-কলমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি হলে তাকে তাপপ্রবাহ বলে। এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি বেশি। পরিভাষায় সেটা হয়তো তাপপ্রবাহ নয়। তবে প্রভাবে তাপপ্রবাহের ঠাকুরদা!

তা হলে বৃহস্পতিবার রাতের ওই হাল্কা হাল্কা ছেঁড়া মেঘ আর ঠান্ডা হাওয়ার রহস্যটা কী?

আবহাওয়া দফতরের খবর, ওই মেঘ আর হাওয়ার মূলে আছে উত্তরবঙ্গের ঘূর্ণাবর্ত। বাতাসের শুকনো ভাব বেড়েছে তারই প্রভাবে। আবহবিদেরা বলছেন, একেই তো পশ্চিমি গরম বাতাস বা লু-এর প্রভাবে শুকনো গরম হাওয়া জাঁকিয়ে বসেছিল। দক্ষিণবঙ্গের হাওয়ায় যেটুকু জোলো ভাব ছিল, উত্তরবঙ্গের ঘূর্ণাবর্তটি তা-ও নিচ্ছে টেনে।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ায় উত্তরবঙ্গে বাতাসের চাপ কমে গিয়েছে। ফলে দক্ষিণবঙ্গ থেকে বাতাস ছুটে যাচ্ছে সেখানে। তার ফলে এখানকার বাতাসে যেটুকু জলীয় বাষ্প ছিল, তা-ও শনৈ শনৈ ছুটছে উত্তরে। দক্ষিণবঙ্গের বাতাসে একটা শূন্যস্থান তৈরি হচ্ছে। আর সাগর থেকে জোলো হাওয়ার জোগান কম থাকায় ঝাড়খণ্ড থেকে আসা গরম বাতাসই সেই শূন্যস্থান পূরণ করছে। বাড়ছে জ্বলুনি।

‘‘জলীয় বাষ্প উত্তরে যাওয়ায় সেখানে বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে শুকনো গরম থেকে নিস্তারের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না,’’ বলছেন কেন্দ্রীয় সরকারের আবহাওয়া মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ।

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচ ডিগ্রি বেশি না-হওয়া সত্ত্বেও তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি কেন, লু দিয়ে শূন্যস্থান পূরণের রহস্যে সেটা পরিষ্কার। কিন্তু তাতে দহন-যন্ত্রণার কোনও হেরফের হয়নি। গরম হাওয়া তপ্ত কড়াইয়ে ভেজেছে সারা দিন। খাতা-কলম আর বাস্তব, দুই অর্থেই তাপপ্রবাহ বয়েছে বাঁকুড়ায়।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানী গণেশকুমার দাস বলছেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ জেলা হয় তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে, নয়তো তাপপ্রবাহের মাত্রার একেবারে কাছে ছিল।’’ তাই গোটা দক্ষিণবঙ্গকে জ্বালা ধরানো গরম সইতে হয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা নাকাল করা গরমেই সকাল থেকে মাঠে নেমে পড়েছেন। ভোট-যুদ্ধের টেনশনের সঙ্গে সঙ্গে জ্বালা ধরানো গরমও যে তাঁদের বেশ কাবু করে ফেলেছে, সেটা মেনে নিচ্ছেন জেলার দাপুটে নেতারাও। বর্ধমান গ্রামীণের জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘রোদে টানা প্রচার করতে করতে মাথায় ঝিম ধরছে। দুপুরে ঘরে এসি চালিয়েও স্বস্তি মিলছে না।’’

এ দিন বর্ধমানে সভা ছিল সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাটের। সেই সভায় যোগ দিতে যাওয়া সমর্থকদের অনেককেই দেখা গেল, রোদ থেকে বাঁচতে দলীয় পতাকায় মাথা ঢেকে নিয়েছেন। আর পূর্বস্থলীর এক তৃণমূলকর্মীর মন্তব্য, ‘‘দাদার সঙ্গে টানা রোদে ঘুরছি তো। শরীরের এমন হাল যে, টক ডাল, আলুসেদ্ধ ছাড়া আর কিছু মুখে রুচছে না।’’ গরমের দাপটে ডান-বাম সব দলের নেতারাই বেলা ১১টার মধ্যে প্রথম দফার প্রচার কার্যত শেষ করে ফেলছেন। দ্বিতীয় দফা শুরু হচ্ছে বিকেল ৪টেয়।

দুই ২৪ পরগনা, বর্ধমান-সহ দক্ষিণবঙ্গের বহু জেলাতেই ভোট বাকি। দিনের গরম যে-ভাবে অসহনীয় হয়ে উঠছে, তাতে আগামী ভোটের দিনগুলিতে প্রকৃতি কতটা উত্তাপ ছড়াবে, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দাপুটে নেতা, কর্মী থেকে আম-আদমি— সকলের মনেই।

হাওয়া অফিস বলছে, আজ, শনিবারেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা ষোলো আনা। তার পরে তাপমাত্রা মাঝেমধ্যে দু’-এক ডিগ্রি সেলসিয়াস নামলেও নামতে পারে। তবে নাকাল করা পরিস্থিতি থেকে আপাতত রেহাই মেলার আশা নেই বললেই চলে।

Heat Wave Hot Weather
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy