বর্ষায় শহরের পথে। শনিবার স্বাতী চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
কখনও ঘাটতি, কখনও আরব সাগরের নিম্নচাপ। দক্ষিণবঙ্গের বর্ষার পথে কাঁটার অভাব ছিল না। কিন্তু সেই সব কাঁটা উপেক্ষা করেই ক্রমশ জাঁকিয়ে বসছে বর্ষা। সৌজন্য বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ ও সক্রিয় মৌসুমি অক্ষরেখা। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আবহবিদদের পূর্বাভাস, নিম্নচাপ কেটে গেলেও এখনই বর্ষার কৃপাদৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হবেন না দক্ষিণবঙ্গের মানুষ।
হাওয়া অফিসের খবর, গত ১৯ জুন দক্ষিণবঙ্গে ঢুকেছিল বর্ষা। সে সময় ঘাটতি ছিল ৩১ শতাংশ। এই ঘাটতি কী ভাবে মিটবে, তা নিয়েও দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না আবহবিজ্ঞানীদের। কিন্তু আবহাওয়ার ভেল্কিতে সেই হিসেব বদলে গিয়েছে অনেকটাই। শনিবারে সেই ঘাটতি নেমে এসেছে ১৩ শতাংশে! উত্তরবঙ্গে অবশ্য প্রথম থেকেই বর্ষা জোরালো রয়েছে। তার জেরে ইতিমধ্যেই সেখানে স্বাভাবিকের থেকে ৪ গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স এলাকার আগামী কয়েক দিনে আরও ভারী বৃষ্টি হবে।
হাওয়া অফিস বলছে, দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার এই সক্রিয়তার পিছনে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ এবং রাজ্যের উপরে সক্রিয় মৌসুমি অক্ষরেখার অবস্থান। তার ফলেই সাগর থেকে জলীয় বাষ্প লাগাতার দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে ঢুকছে। ঘণীভূত হয়ে আকাশ মেঘলা থাকছে। দফায় দফায় বৃষ্টি হচ্ছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে। শনিবারও বাংলাদেশ ও লাগোয়া গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে একটি নিম্নচাপ রয়েছে। তার জেরেই এই বৃষ্টি। হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে— গত ১৯ জুন দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢোকার পরে স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
বর্ষাকালে নিম্নচাপ ও মৌসুমি অক্ষরেখার হাত ধরেই বৃষ্টি মিলবে, এটাই তো স্বাভাবিক।
তা হলে এ ভাবে আলাদা করে কৃতিত্ব দেওয়ার কারণ কী?
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢোকার পরেই আরব সাগরের গুজরাত উপকূলে একটি গভীর নিম্নচাপ দানা বেধেছিল। সেই নিম্নচাপের টানে বাংলার বর্ষা দুর্বল হয়ে পড়বে কি না, তা নিয়ে একটা আশঙ্কা ছিল। কিন্তু ওই নিম্নচাপের সঙ্গেই পূর্ব উপকূলে আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়। ফলে গুজরাত উপকূলের নিম্নচাপের পাল্টা টান ছিল বঙ্গোপসাগরেও। তার ফলেই দক্ষিণবঙ্গের বর্ষা দুর্বল হয়নি।
তা হলে কি এই নিম্নচাপের হাত ধরে এখন জোরালো বৃষ্টি চলবে?
তেমনটা অবশ্য মনে করছেন না আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, নিম্নচাপটি দিন দুয়েকের মধ্যেই দুর্বল হবে। দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের কথায়, ‘‘নিম্নচাপটি দুর্বল হলে জোরালো বৃষ্টি মিলবে না ঠিকই। তবে বৃষ্টি এখন চলবে।’’
মৌসম ভবন বলছে— কেরল, বিহার ও উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একাংশ বাদ দিলে গোটা দেশেই বর্ষা জাঁকিয়ে বসেছে। আরব সাগরের গভীর নিম্নচাপের দৌলতে গুজরাত-রাজস্থানের মরু এলাকাতেও স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উত্তরাখণ্ডে গত কয়েক দিন প্রবল বৃষ্টির জেরে অলকানন্দা, মন্দাকিনী-সহ কয়েকটি নদীর জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বওয়ায় রুদ্রপ্রয়াগ ও চামোলি জেলায় কয়েকটি রাস্তা ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চারধাম যাত্রার প্রচুর তীর্থযাত্রী মাঝরাস্তায় আটকে পড়েছিলেন।
প্রায় ৯০০ জনকে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হয়েছে বলে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন সূত্রের খবর। মানস সরোবর যাত্রাও ভারী বৃষ্টির জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে অবশ্য বৃষ্টি কমেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy