দুষ্কর্ম ঘটলে পুলিশ সক্রিয় হবে, না আগে থেকেই সে দুষ্কর্ম আটকাতে উঠেপড়ে লাগবে। সেই গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ সংক্রান্ত একটি মামলায় বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত কার্যত ভর্ৎসনা করেন রাজ্য পুলিশকে। সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশে এ দিন বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘কখন দুষ্কৃতী এক মহিলার ঘরে ঢুকে অশালীন আচরণ করবে, তার জন্য কি আপনারা অপেক্ষা করে থাকবেন?’’
পাড়ুই-কাণ্ডে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল বা তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের উস্কানিমূলক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্য প্রশাসন, বিশেষত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিচারপতি দত্ত আগে একাধিক বার সমালোচনা করেছেন বিভিন্ন
মন্তব্য করে। এ দিনও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ সংক্রান্ত ওই মামলায় ফের রাজ্য প্রশাসন হাইকোর্টের সমালোচনার মুখে পড়ল বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। তাঁরা আরও মনে করেন, প্রশাসন তার স্বাভাবিক কাজ করছে না বলেই নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় বিচার ব্যবস্থাকে বারবার হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।
কোন প্রসঙ্গে এ দিন ওই মন্তব্য করলেন বিচারপতি দত্ত? পুলিশ জানায়, মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা তথা কলকাতার একটি কলেজের এক শিক্ষিকা হাইকোর্টে মামলা করে জানান, তিনি তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। কয়েক বছর আগে তাঁর বাবা ও মা দু’জনেই মারা যান। তার পর থেকে তিনি একাই বাড়িতে থাকেন।
শিক্ষিকার দাবি, পুলিশের কাছে তিনি একাধিক বার অভিযোগ করেছেন, ২০১১ সাল থেকে স্থানীয় এক প্রোমোটার তাঁর বাড়ির দখল নিতে চাইছেন। ওই প্রোমোটার চাইছেন, মহিলা বাড়িটি তাঁর কাছে বিক্রি করে দিন। মহিলা তাতে রাজি না হওয়ায়, প্রোমোটার তাঁকে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছেন ও উত্যক্ত করছেন। ঘরে দুষ্কৃতী ঢুকিয়ে হামলা চালানোরও ভয় দেখাচ্ছেন তাঁকে। মহিলা মামলার আবেদনে জানান, এ নিয়ে তিনি মধ্যমগ্রাম ও বারাসত থানায় একাধিক বার অভিযোগ জানিয়েছেন। এমনকী, চলতি বছরের মার্চ মাসেও তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ পদক্ষেপ করেনি।
এ দিন মামলাটি শুনানির জন্য আদালতে ওঠে। মামলার আবেদন পড়ে বিচারপতি দত্ত ওই মন্তব্য করে সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ‘‘বারবার অভিযোগ পেয়েও পুলিশ কেন পদক্ষেপ করেনি?’’ পুলিশ অভিযোগ পেয়ে আইনি কী ব্যবস্থা নিয়েছে এবং না নিলে কেন নেয়নি, তা-ও সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চান বিচারপতি দত্ত।
সরকারি আইনজীবী জানান, পুলিশ কী করেছে বা করেনি, তা তিনি এখনও জানেন না। তিনি পুলিশের কাছ থেকে জেনে আদালতকে জানাবেন।
বিচারপতি এ দিন সরকারি আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছেন, পুলিশ কী পদক্ষেপ করেছে, আগামী সোমবার তা জানাতে হবে। ওই দিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করেছেন তিনি।
তবে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, গত কয়েক বছর ধরে ওই মহিলা এবং তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী পুলিশের কাছে একাধিক বার অভিযোগ করেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছে। পুলিশ জানায়, বিষয়টি সম্পত্তি কেন্দ্র করে পারিবারিক বিবাদ। এখানে প্রোমোটার বা তৃতীয় কোনও ব্যক্তির কোনও ব্যাপার নেই। ঘটনাটি নিয়ে একাধিক বার হাইকোর্টে মামলাও হয়েছে। সেই মামলা বাতিলও হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy