Advertisement
E-Paper

কোর্ট বিঁধল আমলাদের, নিয়োগ আবার আটকে গেল প্রাথমিকে

রাজ্যে যথেষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষিত প্রার্থী আছেন। তা সত্ত্বেও প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার কেন কেন্দ্রের কাছে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিল, সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৩

রাজ্যে যথেষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষিত প্রার্থী আছেন। তা সত্ত্বেও প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার কেন কেন্দ্রের কাছে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিল, সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট।

শুধু প্রশ্ন তোলাই নয়। রাজ্যের আমলারা কেন্দ্রকে ভুল বুঝিয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্ন তুলে বৃহস্পতিবার প্রশাসনকে তীব্র কটাক্ষও করেন হাইকোর্টের বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনান। এই প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে স্থিতাবস্থা জারি করেছেন তিনি। অর্থাৎ অজস্র শিক্ষকপদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও আপাতত নিয়োগ করা যাবে না।

শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন যে-ভাবে মার খাচ্ছে, শিক্ষা শিবির তাতে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করছে। উচ্চ আদালতের এ দিনের নির্দেশের পরে প্রাথমিকে নিয়োগ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বলে মনে করছেন শিক্ষামহলের বড় অংশ। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত বছর ১১ অক্টোবর টিচার্স এলিজিবিলিট টেস্ট বা টেট নিয়েছিল রাজ্য। কমবেশি ২০ লক্ষ প্রার্থী সেই পরীক্ষা দেন।

প্রাথমিকের শিক্ষকপদে নিয়োগের পরীক্ষায় আগে প্রশিক্ষিতদের সঙ্গে সঙ্গে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীরাও বসতেন। পরে ঠিক হয়, শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীরাই টেটে বসতে পারবেন। প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীরা যাতে আরও কিছু দিন ওই নিয়োগ পরীক্ষায় বসার সুযোগ পান, সেই ব্যবস্থা করার জন্য রাজ্য সরকার গত বছরের গোড়ায় কেন্দ্রের কাছে আবেদন করে। গত বছরের ১ এপ্রিল কেন্দ্র সেই আবেদন মঞ্জুর করে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে কেন্দ্রের তরফে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই) জানায়, প্রশিক্ষণহীনদের টেটে বসার সময়সীমা ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। তার মধ্যে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই নিয়োগ না-হওয়ায় প্রশিক্ষিত কিছু প্রার্থী হাইকোর্টে মামলা করেন।

মামলার আবেদনে বলা হয়, ৩১ মার্চ পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিয়োগ হয়নি। তাই ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর নেওয়া নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হোক। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি ছিল। আবেদনকারী প্রার্থীদের আইনজীবী সৌমেন দত্ত আদালতে জানান, প্রাথমিক শিক্ষকের যত শূন্য পদ রয়েছে, প্রশিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। অর্থাৎ প্রশিক্ষণ নেওয়া সব প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও আরও কিছু দিন প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগ পরীক্ষায় বসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এতে প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা আরও কমে যাচ্ছে।

এই সওয়াল শুনেই বিচারপতি কারনান মন্তব্য করেন, ‘‘রাজ্য তা হলে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে কেন্দ্রকে ওই চিঠি দিয়েছিল কেন? উচ্চপদস্থ অফিসারেরা তা হলে কি কেন্দ্রকে বিপথে চালনা করেছিলেন?’’ আদালতের পর্যবেক্ষণ ও প্রশ্নের জবাব মেলেনি। তার পরেই আপাতত নিয়োগে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন বিচারপতি কারনান।

এ দিন সকালে বিচারপতি কারনান প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে স্থিতাবস্থা জারি করার পরে দুপুরেই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চে সেই নির্দেশের কথা উল্লেখ করেন রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী সুবীর সান্যাল। তিনি জানান,
নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের তরফে যে-সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, তা নিয়ে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মূল মামলার শুনানি চলছে। সেই মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি।

‘‘তা সত্ত্বেও বিচারপতি কারনান কী ভাবে নিয়োগের উপরে স্থিতাবস্থা জারি করতে পারেন,’’ প্রশ্ন তোলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কৌঁসুলি সুবীরবাবু। প্রধান বিচারপতি তখন সুবীরবাবুকে বলেন, তাঁর (প্রধান বিচারপতির) সচিবালয়ে এই মর্মে একটি আবেদন করা হোক। আবেদন পড়ে প্রয়োজনে নির্দেশ দেবেন তিনি।

টেট নিয়ে পরের পর মামলায় নিয়োগ বিলম্বিত হতে থাকায় বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের অভিযোগ, নিয়োগ পরীক্ষার নামে প্রহসন হচ্ছে। শিক্ষকপদ খালি থেকে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পডুয়ারা। এ দিন হাইকোর্টের নির্দেশের পরে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘যা ভবিষ্যৎ ছিল, তা-ই হল। যোগ্যতাকে প্রাধান্য না-দিয়ে যারা ১০-১২ লক্ষ টাকা উৎকোচ দিতে পেরেছিল, তাদেরই চাকরি পাইয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। সেই জন্যই আদালত এমন ভর্ৎসনা করল।’’

Primary teacher High court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy