Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Hilsa

Hilsa: আইন নেই, ফাঁসে ইলিশের দফারফা

রাজ্য মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, গত তিন বছরে এরাজ্যে ইলিশ উৎপাদন প্রায় ছেষট্টি শতাংশ কমেছে।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২১ ০৬:৩৭
Share: Save:

সাগরের পুবালি হাওয়া বঙ্গে যেমন বর্ষার সোঁদা গন্ধ বয়ে আনে, তেমনই বয়ে আনে জলের রুপোলি শস্য ইলিশের গন্ধও! কিন্তু গন্ধই সার, জাল থেকে প্রমাণ মাপের ইলিশের দেখা নেই! যার পিছনে মৎস্যবিজ্ঞানী থেকে মৎস্য দফতরের কর্তা, মৎস্যজীবী সংগঠনেতার নেতা সবাই দায়ী করছেন ছোট ইলিশ ধরাকে। কড়া আইনের দাবিও করছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

প্রসঙ্গত, পূর্বতন মৎস্যমন্ত্রীরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের ধাঁচে ইলিশের জন্য কড়া আইনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরির গলাতেও পুরনো দিনের সুর শোনা গিয়েছে। তিনি বলছেন, ‘‘সবে দায়িত্ব নিয়েছি। এ রাজ্যে ইলিশ উৎপাদন কমাটা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়। ছোট ইলিশ ধরা রুখতে যাতে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে বিষয়ে কিছু একটা করতে হবেই।’’

কতটা কমে গিয়েছে ইলিশের উৎপাদন?

রাজ্য মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, গত তিন বছরে এরাজ্যে ইলিশ উৎপাদন প্রায় ছেষট্টি শতাংশ কমেছে। নামখানা, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, দিঘার উপকূলে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জুলাই মাসে প্রতি দিন ৩০-৩৫ টন ইলিশ আসত। চলতি বছরের জুলাই মাসে প্রতিদিন সেখানে জালে ইলিশ উঠেছে মেরেকেটে ১০ টন। অথচ প্রতিবেশী বাংলাদেশে গত দশ বছরে বাংলাদেশে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে আটাত্তর শতাংশ।

বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতর সূত্রের খবর, দশ বছর আগে পর্যন্ত জুলাই মাসে বাংলাদেশে প্রতি দিন ইলিশ উঠত প্রায় ১১৫ টন। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৫০ টন। এর পিছনে রয়েছে কড়া আইনি ব্যবস্থা। সে দেশে ছোট ইলিশ (লম্বায় তেইশ সেন্টিমিটারের কম বা ওজনে তিনশো গ্রামের কম) ধরলে মৎস্যজীবীদের জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়। নিয়ম ভেঙে ইলিশ ধরলে জেল ও জরিমানা হয়। অবাধ ইলিশ শিকার ঠেকাতে সেনাও হস্তক্ষেপ করে। ছোট ইলিশের আড়তদারদের জেল ও জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিজন মাইতির অভিযোগ, আমাদের রাজ্যে ছোট ইলিশ ধরলে মৎস্য দফতর সেই মাছ বাজেয়াপ্ত করে নিলামে বিক্রি করে। বিক্রির অর্ধেক টাকা মৎস্যজীবী পান। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এ ক্ষেত্রে ছোট ইলিশ ধরায় উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে চাষীদের!’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘বাংলাদেশ কড়া আইন করতে পারল কিন্তু আমাদের রাজ্য পারল না।’’

পুরুলিয়ায় সিধো কানহো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অসীমকুমার নাথ বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ইলিশ মাছ ধরার ক্ষেত্রে জালের ফাঁসের আয়তন ১০০ মিলিমিটার। অথচ আমাদের রাজ্যে আইনত ৯০ মিলিমিটার জাল বলা বলেও বেশির ভাগ মৎস্যজীবী ৬০ মিলিমিটারের কম আয়তনের ফাঁসের জাল ব্যবহার করছেন। ছোট ফাঁসের জালের অবাধ ব্যবহার ইলিশ মাছের বংশকে ধ্বংস করছে। ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার বন্ধ করতে রাজ্য সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

এ সব শুনে রাজ্যের মৎস্য দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ, ‘‘ইলিশ বাঁচাতে বাংলাদেশের মতো কঠোর আইন প্রণয়ন করতেই হবে।’’

কিন্তু করবে কে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hilsa Hilsa Fish
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE