Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাংলার হিমসাগর ফের সাগরপারে

কিছু কাঁচা। বাকি সব আধপাকা। এই অবস্থাতেই রবিবার কলকাতা থেকে লন্ডন আর রোমে উড়ে গেল বাংলার হিমসাগর। জীবাণুমুক্তির ব্যবস্থা ছিল না রাজ্যে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৭ ১৫:০০
Share: Save:

কিছু কাঁচা। বাকি সব আধপাকা।

এই অবস্থাতেই রবিবার কলকাতা থেকে লন্ডন আর রোমে উড়ে গেল বাংলার হিমসাগর। জীবাণুমুক্তির ব্যবস্থা ছিল না রাজ্যে। তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আম রফতানির দরজা। চার বছর পরে সেই দরজা ফের খুলল।

রফতানিকারীরা জানান, লন্ডনে আর রোমে গিয়ে বিভিন্ন বাজারে আধপাকা হিমসাগর যখন বিক্রির জন্য সাজানো হবে, তখন সবুজ আমই হলুদ হয়ে ভরে উঠবে টইটম্বুর মিষ্টি রসে। হয়ে উঠবে প্রকৃত রসাল। এই দফায় রোমে গিয়েছে ১৫০ কিলোগ্রাম হিমসাগর। লন্ডন-প্রবাসী বাঙালিদের মন ভরাতে একই আম পাঠানো হল ৫৯০ কিলোগ্রাম।

এই খবরে খুশি রাজ্য সরকারও। রবিবার বেসরকারি উদ্যোগে রোম ও লন্ডনে আম রফতানি হয়েছে ঠিকই। তবে সেটা সম্ভব হয়েছে সরকারি সহযোগিতাতেই। রফতানিকারী সংস্থাগুলির তরফে জানানো হয়েছে, এখন থেকে রোজই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হিমসাগর পাঠানো হবে। মূলত উত্তর ২৪ পরগনার হিমসাগরই এখন বিদেশে যাচ্ছে এবং যাবে।

বাংলার আম বিদেশে রফতানির ব্যাপারে সরকারের কয়েকটি দফতরকে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে তিনি মালদহের আম ইউরোপের বাজারে রফতানির ক্ষেত্রে রাজ্য সব রকম সহযোগিতা করবে বলে ঘোষণা করে এসেছেন। মালদহে আম রফতানির পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনাও শুরু হয়ে গিয়েছে। উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গেলে এই মরসুমে মালদহের আমও বিদেশে পাড়ি দেবে।

রাজ্যের কৃষিজাত আনাজ ও ফল রফতানিকারক সংস্থাগুলির সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক অঙ্কুশ সাহা জানান, প্রায় চার বছর পরে বিদেশের বাজারে ফের পাকা আম রফতানি শুরু হল। মূলত ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেই বরাত আসছে। এখন থেকে প্রতিদিনই বাংলার হিমসাগর-সহ বিভিন্ন গোত্রের আম রফতানি হবে।

আম রফতানির জন্য ইউরোপের বন্ধ দরজা ফের খুলল কী ভাবে?

২০১৩ সাল থেকে ইউরোপে আম রফতানি বন্ধ ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক নির্দেশিকায় জানিয়ে দেয়, ইউরোপের দেশে আম রফতানি করতে গেলে গরম জলে আমের স্বাস্থ্য (হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট) পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। যাতে আমের গায়ে লেগে থাকা ছোট মাছি ও অন্যান্য জীবাণু মেরে ফেলা যায়। কিন্তু রাজ্যে সেই পরিকাঠামো ছিলই না।

কলকাতার দু’তিনটি রফতানিকারী সংস্থা যৌথ উদ্যোগে দত্তপুকুরে একটি প্যাকিং হাউস-সহ হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট গড়ে তুলেছে। সেখানে আমের স্বাস্থ্যপরীক্ষার পরে তা রোম ও লন্ডনে পাঠানো হয়েছে। আর দত্তপুকুরের পরীক্ষাগার-সহ আমের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র দিয়েছে কেন্দ্রের কৃষিজাত এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানি উন্নয়ন পর্ষদ ও ন্যাশনাল প্ল্যান্ট প্রোটেকশন অর্গানাইজেশন। ‘‘আম রফতানি ফের শুরু করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। বাংলার আম ফের বিদেশ গেল, এটা রাজ্য ও কেন্দ্র দু’পক্ষের কাছেই সুখবর,’’ বললেন ওই অর্গানাইজেশনের পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধি আর কে শশিহর।

বন্ধ দরজা খোলা এবং আমের সাগর পাড়ি দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরও। ওই দফতরের সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী জানান, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ফল ও আনাজ রফতানিতে যে-সব বাধা রয়েছে, সেগুলে দূর করার চেষ্টা চলছে। ‘‘এই উদ্যোগে অবশ্যই বাংলার আমকে বিশেষ ভাবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এ রাজ্যের আম আমরা বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেব,’’ বলেন নন্দিনীদেবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Export Himsagar Mango Rome London
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE