Advertisement
E-Paper

রক্তে বাসা এইচআইভি-র, ঘর বাঁধছেন ওঁরা

বিশ্ব এডস দিবসের আগের দিন, বৃহস্পতিবারই উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায় সানাই বেজে উঠেছে। ছাদনাতলায় চার হাত এক হয়েছে এইচআইভি আক্রান্ত তরুণ-তরুণীর। ভয়-ভীতি অন্তত এক সন্ধের জন্য মুলতুবি রেখে কব্জি ডুবিয়ে খেয়ে গিয়েছেন শ’চারেক নিমন্ত্রিত। ‘দীর্ঘায়ু হও’ বলে বর-কনেকে আশীর্বাদ করে যেতেও ভোলেননি।

শুভাশিস সৈয়দ ও সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২৯

রক্তে ভিড় করে আছে মারণ ভাইরাস।

কেউই জানেন না, মেয়াদ ঠিক কত দিন। সমাজের আড়চোখ, হঠাৎ অপরিচিত হয়ে ওঠা স্বজন, অনুক্ষণ ঘিরে ফেলতে থাকা সন্দেহ আর ঘৃণা। একাকীত্বের শীত গ্রাস করে সর্বক্ষণ।

ওঁরা বুঝে গিয়েছিলেন— ঘুরে দাঁড়ানোই ভাল! হাতে হাত রেখে।

দাঁড়িয়েছেন।

বিশ্ব এডস দিবসের আগের দিন, বৃহস্পতিবারই উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায় সানাই বেজে উঠেছে। ছাদনাতলায় চার হাত এক হয়েছে এইচআইভি আক্রান্ত তরুণ-তরুণীর। ভয়-ভীতি অন্তত এক সন্ধের জন্য মুলতুবি রেখে কব্জি ডুবিয়ে খেয়ে গিয়েছেন শ’চারেক নিমন্ত্রিত। ‘দীর্ঘায়ু হও’ বলে বর-কনেকে আশীর্বাদ করে যেতেও ভোলেননি।

পাত্রের বাড়ি হাবরায়, বয়স বছর চল্লিশ। ২০০১ সাল থেকে আক্রান্ত। কনের এখন তেইশ, রক্তে জীবাণু ধরা পড়েছে বছর চারেক আগে। দীর্ঘদিন ধরেই এইচআইভি পজিটিভদের নিয়ে কাজ করছেন যুবকটি। আর তা করতে গিয়েই তরুণীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়। ভাল লাগা। একাকীত্ব ঘুচিয়ে এক সঙ্গে পথ চলার সিদ্ধান্ত।

এমনটা যে এই প্রথম ঘটল, তা অবশ্য নয়। বরং‌ এই নবদম্পতির সৌভাগ্য যে পরিবার রয়েছে তাঁদের পাশে। বেশির ভাগের বরাতে কিন্তু তা-ও জোটে না। মুম্বইয়ে পেটের ধান্দায় গিয়ে রক্তে এইচআইভি নিয়ে ফিরেছিলেন হুগলি জেলার কোন্নগরের এক তরুণ। সেটা ১৯৯৫। এ সব কথা পাঁচ-কান করতে নেই, তিনিও করেননি। বিয়ের কথা ওঠে বাড়িতে, তিনি এড়িয়ে যান। পরে জানাজানি হয়। বাবা-মা ছাড়া আর কেউ মানেনি। বাড়ি ছাড়তে হয়। এইচআইভি পজিটিভদের নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার হয়ে চলে যান মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে।

সেখানে গিয়েই তরুণটির পরিচয় হয় খড়গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে। মুম্বইয়ে গিয়ে এইচআইভি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তাঁর স্বামী। কিছু দিনের মধ্যেই মারা যান। সেটা ২০০২ সাল। তরুণী তো বটেই, তাঁদের শিশুপুত্রের রক্তেও জীবাণু ধরা পড়ে। আড়াই বছরের শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। এক মাত্র বেঁচে যায় পাঁচ বছরের মেয়ে, তার দেহে জীবাণু ছিল না। এর পরে তরুণীকে কিন্তু টিঁকতে দেয়নি শ্বশুরবাড়ি। মেয়ে সমেত তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি গিয়ে ওঠেন বাপের বাড়িতে। বহরমপুরে এআরটি সেন্টারে ওষুধ নিতে গিয়ে যোগাযোগ হয় এইচআইভি পজিটিভ মানুষদের নিয়ে কাজ করা সংস্থার সঙ্গে। তরুণীটি সেখানে কাজ নেন, থাকতে শুরু করেন বহরমপুরেই। ওই সংস্থাতেই কাজ করতেন কোন্নগরের তরুণ। সেখানেই দু’জনের পরিচয়। সেটা ২০০৯ সাল। ছ’মাসের মধ্যে তাঁরা বিয়ে করে ফেলেন।

মুর্শিদাবাদেরই লালগোলা ব্লকের কৃষ্ণপুর ও পাহাড়পুরে দু’জোড়া যুগল এইচআইভি শরীরে নিয়েও সংসার পেতেছেন। এইচআইভি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার জেলা প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাসিদুল ইসলামের মতে, আক্রান্তদের নিজেদের মধ্যে থেকেই সঙ্গী বেছে নেওয়ার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। প্রথমত, তাঁরা জানেন যে সুস্থ কাউকে বিয়ে করে সংক্রমিত করার প্রশ্ন নেই। দ্বিতীয়ত, আগে যে তাঁদের মৃত্যুভয় পেয়ে বসত, তা থেকে তাঁরা অনেকটাই বেরিয়ে এসেছেন। তাঁদের বোঝানো গিয়েছে, সাবধানে থাকলে এবং নিয়ম করে ওষুধ খেলে অনেক দিন বাঁচা সম্ভব। আপাতত প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকায় পাকা বাড়ি তুলতে ব্যস্ত বহরমপুরের দম্পতি। তরুণীর মেয়ে রয়েছে দাদু-দিদার কাছে। সে এখন ক্লাস এইট। দিব্যি চলছে।

ওঁরা সকলেই জানেন, যেতে এক দিন হবেই। কে-ই বা অমর?

কিন্তু বীজমন্ত্র একটাই— একাকী যাব না অসময়ে...

Marriage HIV AIDS World AIDS Day বিশ্ব এডস দিবস এইচআইভি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy