Advertisement
E-Paper

ছাত্র আন্দোলন কই, কদর শুধু দাদাগিরির

রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশই মনে করছে, কলেজে ছাত্র ভর্তির নামে এমন দুর্নীতি-চক্রের হদিশ এই রাজ্যে এই প্রথম। কিন্তু সমস্যার শিকড় আরও গভীরে। বাংলার ছাত্র রাজনীতি থেকে আন্দোলন বস্তুটিই প্রায় উধাও!

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ০৬:৪০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দক্ষিণের কেরলে ক্ষমতাসীন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বয়স ২৫ ছুঁলে ছাত্র সংগঠনের পদে আর থাকা যাবে না। স্নাতকোত্তর বা গবেষণার কাজে তিনি যদি পড়ুয়াও হন, বয়সের গণ্ডি মানতেই হবে। ঠিক সেই সময়ে বাংলায় বিতর্ক ক্ষমতাসীন তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনে বেশ কিছু জেলা সভাপতি পদে প্রায় প্রৌঢ়দের অবস্থান নিয়ে! কলেজে কলেজে ভর্তির নামে মোটা টাকা আদায়ের অভিযোগ ঘিরেই এই ‘দাদা’দের পরিচয় ফের প্রকাশ্যে এসেছে।

রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশই মনে করছে, কলেজে ছাত্র ভর্তির নামে এমন দুর্নীতি-চক্রের হদিশ এই রাজ্যে এই প্রথম। কিন্তু সমস্যার শিকড় আরও গভীরে। বাংলার ছাত্র রাজনীতি থেকে আন্দোলন বস্তুটিই প্রায় উধাও! এখন যা আছে, তা হল কলেজে কলেজে দখলদারির জন্য গা-জোয়ারি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বাম জমানায় কলেজে টাকা তোলার অভিযোগ না থাকলেও তখন ছাত্র সংসদ দখলের জন্য সিপিএমের লোকাল কমিটির নেতারা গা ঘামাতেন। আর পরিবর্তনের পরে ছাত্র-দাদা-নেতা সব মিলেমিশে একাকার!

কেরল এখন পঁচিশের পাঁচিল তুলে দিলেও বাংলায় অবশ্য ছাত্র রাজনীতিতে বয়সের বেড়া মানেনি প্রায় কোনও দলই। ছাত্র পরিষদে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বা এসএফআইয়ে সৈফুদ্দিন চৌধুরী, মানব মুখোপাধ্যায়েরা যখন রাশ ধরে রেখেছেন, তখন তাঁরা ছাত্র রাজনীতির বয়স পেরিয়ে গিয়েছেন। অতীতের নেতারা যদি চল্লিশের ঘরে থেকে থাকেন, পরম্পরা গড়াতে গড়াতে এখন সেটা ৫০-৫৫ পেরিয়েছে।

শ্যামল চক্রবর্তী, অসীম চট্টোপাধ্যায় বা সুব্রতবাবুর মতো অতীতের ছাত্র রাজনীতির কাণ্ডারীরা অবশ্য একমত, আদর্শের অপমৃত্যু ঘটে গিয়েছে। মন্ত্রী সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের সময়ে বাম বা দক্ষিণপন্থী যে যেমন রাজনীতিই করুক, তার মধ্যে একটা আদর্শ ছিল। এখন যা হচ্ছে, সেটা সার্বিক অবক্ষয়। কখনও কখনও এমন সময় আসে। হয়তো সময়ই আবার এর সুরাহা করবে এক দিন!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ষীয়ান সদস্য শ্যামলবাবু বলছেন, ‘‘ছাত্রেরা যেমন দেখে, তেমন শেখে। এখন কলেজে অন্যদের মনোনয়ন দিতে না দিয়ে জোর করে দখল করা হচ্ছে। যাঁরা ছাত্র সংগঠনের হয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন, তাঁরা ছাত্রদের বেছে নেওয়া প্রতিনিধিই নন।’’

আন্দোলনের ধার-ভার দুর্বল হয়ে গেলেও বামপন্থী দলের সাংগঠনিক কাঠামোর দৌলতেই এসএফআইয়ের আঁতুড় থেকে নেতৃত্বে তুলনায় বেশি মুখ পেয়েছে সিপিএম। বিমান বসু, শ্যামলবাবু, সীতারাম ইয়েচুরি থেকে আজকের বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী— সকলেই ছাত্র সংগঠন থেকে উঠে আসা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হয়ে যে শঙ্কুদেব পণ্ডা, অশোক রুদ্র, জয়া দত্তেরা ইদানীং কালে ময়দান কাঁপিয়েছেন, বেশ দিন দলীয় নেতৃত্বের আস্থাই তাঁদের উপরে থাকেনি। আর প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, সুব্রতবাবু, কুমুদ ভট্টাচার্যের মতো ছাত্র নেতা তৈরি করেছে যে মূল ছাত্র পরিষদ, তাদের অস্তিত্বই এখন বিপন্ন। কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘শিক্ষা ব্যবস্থাটাই ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে, তেমনই হাল ছাত্র রাজনীতির!’’

সার্বিক নিম্নগামিতার অভিযোগের মধ্যেও কিছু ছোট সংগঠন অবশ্য এখনও নিখাদ শিক্ষাগত বিষয় ধরে সীমিত শক্তি নিয়েও লড়ে যাচ্ছে। এসইউসি-র ডিএসও বা সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের আইসা-র দাবিদাওয়া তাই এখনও কিছু গুরুত্ব পায় শিক্ষা প্রশাসনের কাছে।

Education Students Hooliganism Student's Movement College Admission Extortion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy