Advertisement
E-Paper

দেদার ভাঙচুর নার্সিংহোমে, তটস্থ রোগীরা

রবিবার বর্ধমানের কেশবগঞ্জ চটিতে রোগীমৃত্যুর পরে নার্সিংহোমে এমন তাণ্ডব চলল ঘণ্টা দুয়েক ধরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:১৪
নার্সিংহোমে তখন চলছে ভাঙচুর। ইনসেটে সুমিতকুমার ঠাকুর। নিজস্ব চিত্র

নার্সিংহোমে তখন চলছে ভাঙচুর। ইনসেটে সুমিতকুমার ঠাকুর। নিজস্ব চিত্র

লাঠিসোটা হাতে ভিতরে ঢুকে পড়েছে এক দল যুবক। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কম্পিউটার, আসবাবপত্র, চিকিৎসার নানা যন্ত্রপাতি। উপরে আটকে পড়ে তখন ভয়ে কাঁপছেন জনা চারেক রোগী। রবিবার বর্ধমানের কেশবগঞ্জ চটিতে রোগীমৃত্যুর পরে নার্সিংহোমে এমন তাণ্ডব চলল ঘণ্টা দুয়েক ধরে।

শহরের নতুনগঞ্জের দিঘিরপুল এলাকার সুমিতকুমার ঠাকুর (২৮) অ্যাপেনডিক্স অস্ত্রোপচারের জন্য কেশবগঞ্জ চটি থেকে গোদা যাওয়ার রাস্তার মুখে তিন তলা নার্সিংহোমটিতে ভর্তি হন শুক্রবার। শনিবার অস্ত্রোপচার হয়। রবিবার তাঁকে নার্সিংহোম থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ আচমকা ‘অবস্থা খারাপ’ বলে সুমিতকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান নার্সিংহোমের কর্মীরা। কিন্তু তাঁদের কাছে ‘রেফারেল’ কোনও নথি না থাকায় প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিতে চাননি। নথি আসার পরে ভর্তি নিতে গিয়েই চিকিৎসকেরা জানান, অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে সুমিতের।

হাসপাতালের মর্গে দাঁড়িয়ে মৃতের দাদা সন্দীপ ঠাকুরের অভিযোগ, “ভাই শৌচাগারে পড়ে গিয়েছে বলে নার্সিংহোম থেকে বার করে আনেন কর্মীরা। আমার মা সেখানে থাকলেও কিছু জানানো হয়নি। ফোন করে বলা হয়, ভাইয়ের শরীর খারাপ, হাসপাতালে আসুন।” এলাকার যুবকের মৃত্যুর খবর পেয়ে সকাল ৯টা নাগাদ জনা তিরিশ-চল্লিশ লোক নার্সিংহোমে চড়াও হয়।

পরিস্থিতি বুঝে কর্মীরা নার্সিংহোমের একটি অংশ তালা দিয়ে পালিয়ে যান। দোতলায় আটকে পড়েন দু’জন প্রসূতি-সহ চার জন রোগী। শনিবার শিশুসন্তানের জন্ম দিয়েছেন মন্তেশ্বরের সিহিগ্রামের খুশবু বেসরা। নার্সিংহোমের এক পাশে দাঁড়িয়ে খুশবুর ভাই বাপি বলেন, “ভাঙচুর-অবরোধের জন্য শিশুকে দেখতে পারেননি ডাক্তার। বোন কেঁদেই চলেছে।” অবরোধ তোলার পরে পুলিশ সদ্যোজাত ও তাঁর মাকে অন্য নার্সিংহোমে ভর্তির ব্যবস্থা করে। অন্য নার্সিংহোমে যাওয়ার পথে আর এক প্রসূতির মা রেখা বাগদি বলেন, “সকাল থেকে আমরা বন্ধ ঘরে বসেছিলাম। আতঙ্কে যেন সময় কাটতে চাইছিল না। আমার মেয়ের কোনও ক্ষতি হলে, কী হতো!” আশপাশের নার্সিংহোমেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

নার্সিংহোম মালিককে ঘটনাস্থলে এসে এই মৃত্যুর জন্য জবাবদিহি করতে হবে দাবি করে জিটি রোড অবরোধ করা হয়। ঘণ্টাখানেক পরে বর্ধমানের নার্সিংহোম মালিক সমিতির কর্তারা আসেন। অবরোধকারীদের দাবিমতো তাঁরা ওই নার্সিংহোমের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনাস্থলে আসার অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি আসতে চান না জেনে ফের অশান্ত হয়ে ওঠে জনতা। ফের এক দফা নার্সিংহোমের অপারেশন থিয়েটার, চোখের চিকিৎসার যন্ত্রপাতি-সহ নানা জিনিস ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ লাঠি চালিয়ে অবরোধকারীদের হটিয়ে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে ১৬ জনকে আটক করা হয়।

ওই নার্সিংহোমের চিকিৎসক কামাল হোসেন বলেন, “আমিই অস্ত্রপোচার করেছিলাম। কিন্তু কী জন্য ওই যুবক মারা গেল, বুঝতে পারছি না।” নার্সিংহোম মালিক সমিতির সম্পাদক শেখ আলালাউদ্দিন বলেন, “নার্সিংহোমটির মালিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ঘটনাস্থলে আসতে চাননি। তিনি এলে হয়তো এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত।”

Hospital vandalism patients
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy