বড়তলার ফুটপাথে নির্যাতিতা শিশুটি এখনও জীবিত। হাসপাতালে এখনও তার চিকিৎসা চলছে। এই ঘটনায় সোমবার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত। মঙ্গলবার তাঁকে ফাঁসির শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় নির্যাতিতা জীবিত থাকার পরেও দোষীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঘটনা বিরল। বুধবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা জানান, এ ক্ষেত্রে সম্ভবত বড়তলাকাণ্ডই প্রথম।
বড়তলার ফুটপাথে সাত মাস বয়সি শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে গত নভেম্বরে। কিছু দিন পর ঝাড়গ্রাম থেকে অভিযুক্ত রাজীব ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক ভাবে এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাঁকে শনাক্ত করেছিল পুলিশ। বড়তলাকাণ্ড নিয়ে বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন সিপি। তিনি বলেন, ‘‘যা তথ্যপ্রমাণ ছিল, তার উপর নির্ভর করে ঝাড়গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় রাজীব ঘোষকে। এই ঘটনার তদন্তের জন্য সিট গঠন করেছিলাম আমরা। ২৮ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে পেরেছি। ৭৯ দিনের মাথায় অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। সম্ভবত এটাই প্রথম কোনও ধর্ষণের ঘটনা, যেখানে নির্যাতিতা বেঁচে থাকা সত্ত্বেও দোষীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পুরোটাই তদন্তকারী আধিকারিক, ডিসি (উত্তর) এবং যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ)-এর নেতৃত্বাধীন দলের কৃতিত্ব।’’
আরও পড়ুন:
কী ভাবে দোষীকে চিহ্নিত করলেন তদন্তকারীরা? সিপি জানিয়েছেন, ঘটনার পর প্রথম দু’দিন তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছিল। ঘটনার দিন রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। ফলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে কিছু ফুটেজ পুলিশের হাতে আসে, যা থেকে অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়। শিশুটির শরীরে বেশ কিছু কামড়ের দাগ পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলি অভিযুক্তের দাঁতের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। এ ছাড়াও ডিএনএ নমুনা, রক্তের নমুনা মিলিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। তা থেকেই অভিযুক্তের দোষ সম্পর্কে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর বড়তলা থানায় শিশু নিখোঁজের অভিযোগ জানিয়েছিলেন ফুটপাথবাসী এক দম্পতি। কয়েক ঘণ্টা পরে ওই ফুটপাথ থেকেই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। রাজীব পুলিশের জালে ধরা পড়েন ৪ ডিসেম্বর। লালবাজার সূত্রে খবর, তিনি ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের বাসিন্দা। বয়স ৩৪ বছর। শিশুটির যৌনাঙ্গে একাধিক ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। প্রমাণ মিলেছিল যৌন নির্যাতনের। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে সরকারি আইনজীবী দাবি করেছিলেন, যে ভাবে শিশুটির উপর অত্যাচার হয়েছে, তা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’। চিকিৎসকেরাও সে কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেন আইনজীবী। পরের দিন আদালত অভিযুক্তকে ফাঁসির শাস্তি শুনিয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এবং পকসো আইনে তাঁর দোষ প্রমাণিত হয়।