ট্যাংরায় কিশোরী এবং দুই মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় রহস্য আরও জট পাকছে। স্ত্রী এবং সন্তানদের খুন করেই কি বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছিলেন দুই যুবক? আদৌ কি এটি আত্মহত্যার ঘটনা? পালাতে হলে কেন তাঁরা শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিলেন? প্রশ্ন উঠেছে। ট্যাংরায় মৃতদের এক জনের গলাতেও ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। তার পর থেকেই জোরদার হয়েছে খুনের তত্ত্ব।

প্রণয় দে এবং প্রসূন দে চামড়ার ব্যবসা করেন। তাঁদের স্ত্রী সুদেষ্ণা দে এবং রোমি দে-র দেহ বুধবার সকালে উদ্ধার করা হয়েছে। পাশেই ছিল প্রণয় ও সুদেষ্ণার কিশোরী কন্যার দেহ। দুই মহিলারই হাতের শিরা কাটা অবস্থায় ছিল। রোমির গলায় মিলেছে ক্ষতচিহ্ন। মৃত কিশোরীর মুখ থেকে ফেনা বার হচ্ছিল। তবে তার দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। রহস্য আরও জোরালো হয় বুধবার সকালে বাইপাসের ধারে একটি পথ দুর্ঘটনার সঙ্গে এই তিন মৃত্যুর যোগ প্রকাশ্যে আসার পর। বাইপাসে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে পিলারে ধাক্কা মারে একটি গাড়ি। তাতে ছিলেন প্রণয়, প্রসূন ও তাঁর শিশুপুত্র। তার বয়স ১০ বছরেরও কম। তিন জনই গুরুতর জখম অবস্থায় হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন।
আরও পড়ুন:
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধদমন) রুপেশ কুমার জানান, হাসপাতালে তিন জনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাঁরা দাবি করেছেন, ছ’জন একসঙ্গে পায়েসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খেয়েছিলেন। পরে গাড়ি নিয়ে তিন জন বেরিয়ে পড়েন এবং আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে পিলারে ধাক্কা মারেন। আর্থিক সমস্যার কারণেই একসঙ্গে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, দাবি প্রণয় এবং প্রসূনের। কিন্তু তদন্ত যত এগিয়েছে, রহস্য ঘন হয়েছে। ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পর কেন তাঁরা গাড়ি নিয়ে বেরোলেন? কেনই বা শিরা কাটা হল দুই মহিলার? তবে কি বাড়িতে তিন জনকে খুন করার পর তাঁরা পালানোর উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন? পিলারে ধাক্কা কি ইচ্ছাকৃত? না পালানোর পথে নিছক দুর্ঘটনা? প্রশ্ন উঠেছে।বাই

বাইপাসে প্রণয় এবং প্রসূনের দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
ট্যাংরা এলাকায় চারতলা বাড়ি প্রণয়দের। তার দোতলায় তিনটি আলাদা ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তিন জনের দেহ। মিলেছে কাগজ কাটার একটি ছুরিও। শিরা কাটতে সেটিই ব্যবহার করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান।
ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাও। তিনি বলেন, ‘‘তিন জনের দেহ পাওয়া গিয়েছে। এক জন নাবালিকা। ১৪-১৫ বছর বয়স। তার দেহে তেমন কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। দুই মহিলার দেহে আঘাত রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বোঝা যাবে। গড়ফা থানা এলাকায় একটা দুর্ঘটনা ঘটে। তাতে আহত হয়েছেন এই দুই মহিলার স্বামীরা। এই ঘটনার কারণ কী, ওরা করেছে না অন্য কেউ এর সঙ্গে জড়িত, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত এখনও একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। আহতদের বয়ান যাচাই করে দেখা হচ্ছে। আত্মহত্যা না খুন, এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আগে দেখতে হবে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’