E-Paper

সালকিয়ায় ফ্ল্যাটের ভিতরেই খুন গৃহকর্তা, আটক দুই কিশোর

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম দেবব্রত পাল ওরফে বাপ্পা (৫০)। তিনি একটি বেসরকারি ঋণ প্রদানকারী সংস্থায় চাকরি করতেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:২৭

—প্রতীকী চিত্র।

সকাল ৯টার সময়েও তাঁকে পুরসভার সাফাইকর্মীর হাতে আবর্জনা ভর্তি প্যাকেট তুলে দিতে দেখেছেন প্রতিবেশীরা। এর মিনিট পনেরোর মধ্যেই তাঁর ঘর থেকে ভেসে আসে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার, সেই সঙ্গে গোঙানির শব্দ। প্রতিবেশীরা আর দেরি না করে দরজা ভেঙে ফ্ল্যাটের ভিতরে ঢুকে স্তম্ভিত হয়ে যান। তাঁরা দেখেন, ফ্ল্যাটের মালিক মৃত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছেন। কোমরে জড়ানো রয়েছে তোয়ালে। তাঁর নাকের পাশে, চোখের কোণে জমাট বাঁধা রক্ত। চোখ দু’টি যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। ওই ঘরেরই অন্য এক কোণে বসে রয়েছে পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এক কিশোর এবং শৌচাগারের মধ্যে শুয়ে কাঁপছে তারই এক সহপাঠী বন্ধু।

সোমবার সকালে রহস্যময় এই খুনের ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার সালকিয়ার কৈবর্তপাড়া লেনের একটি ছ’তলা আবাসনের চারতলার ফ্ল্যাটে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম দেবব্রত পাল ওরফে বাপ্পা (৫০)। তিনি একটি বেসরকারি ঋণ প্রদানকারী সংস্থায় চাকরি করতেন। এ দিনের ঘটনার পরে দেবব্রতের ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে নবম শ্রেণির দু’জন পড়ুয়াকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, আটক কিশোরদের মধ্যে এক জন ওই আবাসনেরই এক বাসিন্দার ছেলে। অন্য জন তারই স্কুলের সহপাঠী। খুনের ঘটনায় এই দু’জনের কোনও ভূমিকা আছে কিনা, আপাতত সেটাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, দেবব্রতকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করা হয়েছে। তাঁর ডান হাতের কব্জির কাছে একটি গভীর দাগ দেখে পুলিশের সন্দেহ, বাঁচার চেষ্টায় দেবব্রত হাত দিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তাঁর হাত চেপে ধরায় ওই দাগ হয়েছে। এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে দেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই আবাসনের নীচে এলাকার বাসিন্দারা ভিড় করেছেন। পরিবেশ থমথমে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছেন হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, বছর পাঁচেক আগে দেবব্রতের স্ত্রী জয়তী পাল ওই ফ্ল্যাটেই গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন। তাঁদের একটি ১০ বছরের মেয়ে রয়েছে। বর্তমানে ওই ফ্ল্যাটে মেয়ে ও বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে বসবাস করছিলেন দেবব্রত। কিন্তু রবিবার রাতে ঠাকুরমা ও নাতনি, কেউই ফ্ল্যাটে ছিলেন না। তবে, নিত্যদিনের মতোই রাতে ভাগ্নে দেবব্রতের ফ্ল্যাটে শুতে এসেছিলেন তাঁর মামা তপন নন্দী।

এ দিন তপন বলেন, ‘‘কাল অন্যান্য দিনের মতোই রাতে শুয়ে পড়েছিলাম। সকালে উঠে দেবব্রতের জন্য চা করে রেখে আমি আমার কাজে বেরিয়ে যাই। তত ক্ষণ কোনও ঘটনা ঘটেনি। পরে ও খুন হয়েছে শুনে ছুটে আসি।’’ মামাও বুঝতে পারছেন না, কেন দেবব্রতকে কেউ খুন করবে। ওই আবাসনের দোতলার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা দাস বলেন, ‘‘সকালে ওই ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে আর্তনাদ আর গোঙানির শব্দ শুনে আমরা সবাই ছুটে গিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকি। দেখি, দেবব্রত মেঝেতে পড়ে রয়েছে। মুখে, নাকে, চোখে রক্ত। ওই ঘরেই পাওয়া যায় দুই কিশোরকে। যত দূর জানি, এই আবাসনের যে ছেলেটিকে ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছে, তার সঙ্গে দেবব্রতের খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।’’

হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা ঘরটিকে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য সিল করে দিয়েছি। ফ্ল্যাটের বাইরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। খুনের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়নি। দুই কিশোরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, খুব শীঘ্রই রহস্যের কিনারা হয়ে যাবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

salkia Murder

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy