পরিত্যক্ত কারখানার আবাসন মাথা গোঁজার জায়গা। সংসারে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’। এ হেন পরিবারের তরুণ বিশ্ব যোগাসন চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ২৯ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল প্রতিযোগিতা হবে ভিয়েতনামের হ্যানয়তে। যাতায়াতে লাখ টাকার কাছাকাছি খরচ। আনুষঙ্গিক আরও খরচ আছে। ছেলের স্বপ্ন পূরণে সেই টাকা জোগাড়ের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন বাবা-মা।
হুগলির বৈদ্যবাটী পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বারিক জঙ্গল রোডের বাসিন্দা ওই তরুণের নাম অতনু হালদার। সে জানে, বিশ্বের আঙিনায় যাওয়া কতটা কঠিন। তবে যেতে পারলে যে দাঁতে দাঁত চেপে সেরা লড়াইটাই দেওয়ার চেষ্টা করবে, সে কথা জানাতে ভোলে না।
বৈদ্যবাটীর বনমালী মুখার্জি ইনস্টিটিউশনের একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগে পড়ে অতনু। সম্প্রতি মেদিনীপুরে ৩৬তম জাতীয় যোগাসন চ্যাম্পিয়নশিপে ভাল ফল করে। তার ফলে দশম বিশ্ব যোগাসনে জুনিয়র বিভাগে ‘রিদমিক’ ইভেন্টে যোগদানের ছাড়পত্র মেলে। আগামী ২৯ মার্চ
থেকে পয়লা এপ্রিল ওই
প্রতিযোগিতা হবে।
অতনুর বাবা সঞ্জয় হালদার ভ্যান চালান। মা বুলু হালদার জানান, ভিয়েতনামে যাওয়ার জন্য ৩৫ হাজার টাকা পাঠানোর কথা ছিল সোমবারের মধ্যে। জোগাড় হয়নি। রাজ্য যোগা সংস্থার কাছে আরও পাঁচ দিন সময় চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের স্কুল, ক্লাবের প্রশিক্ষক, স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি, পুরপ্রধান, বিধায়ক সকলকেই জানিয়েছি। সকলের থেকেই আশ্বাস পেয়েছি। কিন্তু অর্থ জোগাড় না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছি। তবে আশা করছি, সকলের সহযোগিতায় ছেলে ওখানে যেতে পারবে।’’ অতনুর স্কুল সূত্রের দাবি, স্কুলের পরিচালন কমিটির তরফেও টাকার জন্য বিভিন্ন জায়গায় দরবার করা হচ্ছে।
এলাকার বিধায়ক অরিন্দম গুঁই বলেন, ‘‘ছেলেটি যাতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।’’ স্থানীয় পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো বলেন, ‘‘স্কুল পরিচালন কমিটির তরফে পুরসভায় জানানো হয়েছে। তাদের আশ্বস্ত করেছি, পুরসভা ও ব্যক্তিগত ভাবে আমি সাধ্যমতো সহযোগিতা করব।’’
বুলু জানান, ছেলেবেলায় শারীরিক সমস্যার কারণে চিকিৎসক যোগাসনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখনই স্থানীয় ক্লাবে তার যোগাসনে হাতেখড়ি। এখন সে উত্তর ২৪ পরগনার গরিফার একটি ক্লাবে অনুশীলন করে।
অতনু বলে, ‘‘প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মহকুমা, জেলা ও রাজ্য স্তরে সাফল্য পেয়েছে। এ বারেই প্রথম জাতীয় স্তরে নেমে সাফল্য পেয়েছি। আশায় আছি, ভিয়েতনামে গিয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারব।’’
অপেক্ষা শুধু অর্থ সংস্থানের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)