ডাঙার খোঁজে। জয়পুর। —ফাইল চিত্র।
ডিভিসি-র ছাড়া জল ভাসিয়ে দিল হাওড়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাকে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বুধবার রাত পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষ মানুষ বন্যাপীড়িত। ডিভিসি-র ছাড়া জল আজ, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আসবে। ফলে, ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলায় প্রায় ৯০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৬ হাজার মানুষ।
রবিবার থেকেই ডিভিসি দফায় দফায় জল ছাড়তে শুরু করে। দামোদরের বাঁধ উপচে শুধু উদয়নারায়ণপুর ভাসেনি, রূপনারায়ণ ও মুণ্ডেশ্বরীর জল বেড়ে যাওয়ায় আমতা ২, আমতা ১ এবং বাগনান ১ ব্লকের বেশ কিছু এলাকাও প্লাবিত হয়েছে।
বুধবার উদয়নারায়ণপুরে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের সচিব রাজেশ পাণ্ডে। সঙ্গে ছিলেন জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি-সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। ত্রাণ ব্যবস্থার তদারকিতে ছিলেন মন্ত্রী পুলক রায়। তিনি বলেন, ‘‘বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সব রকম পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উদয়নারায়ণপুর। এখানে ৬৮টি ত্রাণশিবিরে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের খাবার ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে। উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, বাস স্ট্যান্ড ও ব্লক অফিস তলিয়ে গিয়েছে। আমতা-উদয়নারায়ণপুর রোডে জল উঠে যাওয়ায় বাস-সহ সব ধরনের যান চলাচল এ দিন দুপুরের পর থেকে বন্ধ হয়ে যায়। উদয়নারায়ণপুর মাধবীলতা মহাবিদ্যালয়ে এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সিমেস্টার পরীক্ষার সিট পড়েছিল আমতা রামসদয় কলেজের ছাত্রছাত্রীদের। জলে ডুবে যাওয়ায় এই পরীক্ষাকেন্দ্র বদল করে নিয়ে যাওয়া হয় আমতার একটি বেসরকারি বি এড কলেজে। উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেলের একতলার রোগীদের দোতলায় স্থানান্তরিত করা হয়। বিদ্যুৎ চলে গেলেও পরিষেবা সচল রাখতে জেনারেটরের জন্য কয়েকশো লিটার কেরোসিন মজুত রাখা হয়।
মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণ ভাসিয়েছে ‘দ্বীপাঞ্চল’ বলে পরিচিত আমতা ২ ব্লকের ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এবং ভাটোরা— এই দুই পঞ্চায়েতকে। বর্তমানে পঞ্চায়েত দু’টি জেলার মূল ভূখণ্ডের থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ দিন জলে এতটাই স্রোত ছিল যে লঞ্চে করে বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার করে নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও প্রশাসনকে বেগ পেতে হয়েছে। এখানে অন্তত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েন। দ্বীপাঞ্চলে মোট ১০টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ।
আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল জানিয়েছে, ওই দুই পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের কাছে ত্রাণ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য কুলিয়াঘাটে কন্ট্রোল-রুম করা হয়েছে।
দামোদর রেয়াত করেনি জগৎবল্লভপুরকেও। কানা দামোদর হয়ে ডিভিসি-র জল ঢুকেছে এখানকার তিনটি পঞ্চায়েতে। তবে, কোনও পঞ্চায়েতই পুরোপুরি প্লাবিত না হওয়ায় পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। বাঁধে বালির বস্তা ফেলা হয়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রঞ্জন কুন্ডু বলেন, ‘‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব রকম প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। পোলগুস্তিয়ার ৪১ জন দুর্গতকে একটি হস্টেলে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy