Advertisement
২০ মে ২০২৪
সরকারি সাহায্য নেই, তবু লড়ছেন দিনমজুর ‘দ্রোণাচার্য’
CWG 2022

Achinta Sheuli: সোনার ছেলে অচিন্ত্যের হাতেখড়ি অষ্টমের আখড়ায়

আন্দুলের বাসিন্দা সুখেন দে ২০১৪ সালে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছিলেন। ২০১০ সালে দিল্লিতে কমনওয়েলথ গেমসে তিনি পেয়েছিলেন রুপো।

পাড়ার খুদেদের সঙ্গে ছবি হাতে অচিন্ত্যর মা ও দাদা।

পাড়ার খুদেদের সঙ্গে ছবি হাতে অচিন্ত্যর মা ও দাদা। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২২ ০৮:১৮
Share: Save:

আন্তর্জাতিক মঞ্চে সোনা জিতেছেন ঘরের ছে‌লে। রাজ্য জুড়ে চর্চায় হাওড়ার সোনার ছেলে অচিন্ত্য শিউলি। কিন্তু তাঁর সাফল্যে নিজের রাজ্যের অবদান কতটুকু? ভারোত্তোলনে এ রাজ্যে উপযুক্ত পরিকাঠামো কোথায়? অচিন্ত্যের পদক-জয়ে আরও একবার সামনে এল এই সব প্রশ্ন। ক্ষোভের কথা শোনা গেল অচিন্ত্যেরপূর্বসূরি হাওড়া জেলারই দুই ভারোত্তোলকের গলায়।

আন্দুলের বাসিন্দা সুখেন দে ২০১৪ সালে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছিলেন। ২০১০ সালে দিল্লিতে কমনওয়েলথ গেমসে তিনি পেয়েছিলেন রুপো। অচিন্ত্যের মতোই সুখেনও সপ্তম শ্রেণিতে স্থানীয় স্কুলের পাঠ চুকিয়ে পুণের আর্মি স্পোর্টস ইনস্টিটিউটে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে আধুনিক প্রশিক্ষণের সুযোগ মেলে। অচিন্ত্যের মতো তিনিও সেনাবাহিনীতে কর্মরত।

সোনা জয়ের জন্য অচিন্ত্যকে অভিনন্দন জানিয়েও সুখেনের আক্ষেপ, ‘‘আমাদের রাজ্যে সরকার যদি ভারোত্তোলকদের জন্য উন্নত মানের পরিকাঠামো গড়ে তুলত, তা হলে আমাদের পুণে যেতে হত না।’’

১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে ভারোত্তোলনে দেশের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আন্দুলেরই বাসিন্দা কমলাকান্ত সাঁতরা। তবে, পদক পাননি। তিনি ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতেন। বছর দুই হল অবসর নিয়েছেন। অচিন্ত্যের সাফল্যে তিনি অভিভূত। সুখেনের আক্ষেপ তাঁর গলাতেও, ‘‘হাওড়া জেলা থেকে একের পর এক ভারোত্তোলকের আন্তর্জাতিক মহলে সাফল্য আসছে। বাংলার মুখ উজ্জ্বল হচ্ছে। কিন্তু এই সাফল্যে বাংলার অবদান কোথায়?’’ তিনি মনে করেন, অচিন্ত্য এবং সুখেন সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়াতেই বড় ধরনের সাফল্যে র মুখ দেখেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যে প্রশিক্ষণের কোনও পরিকাঠামোই নেই। সেটা করা হলে এই সাফল্যে বাংলার অবদানের কথা বলা যেত।’’

কমলাকান্ত এবং সুখেন দু’জনেরই মত, হাওড়ায় অসংখ্য ব্যায়াম সমিতি আছে। সেখানে অনুশীলনের সময় ভারোত্তোলন বা বডিবিল্ডিংয়ে ছেলেদের আকর্ষণ তৈরি হয়। কিন্তু একটা স্তরের পরে এইসব ব্যায়াম সমিতি উঠতি ভারোত্তোলকদের কাজে আসে না। কারণ, এখানে না আছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, না পরিকাঠামো। রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন ক্লাব যখন লক্ষ লক্ষ টাকা সরকারি অনুদান পাচ্ছে, তখন পেটে কার্যত গামছা বেঁধে সাফল্যের দিকে ছুটছেন অচিন্ত্যের মতো ছেলেরা। কেন সরকার তাঁদের দিকে ফিরে তাকায় না, সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

কমলকান্তের ক্ষোভ, ‘‘আধুনিক যন্ত্রপাতি বা উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে অনেক প্রতিভা অকালে নষ্ট হয়ে যায়। কেউ কেউ পুণে চলে যান সাফল্য পেতে।’’

প্রশিক্ষক অষ্টম দাসকে নিয়ে উল্লাস।

প্রশিক্ষক অষ্টম দাসকে নিয়ে উল্লাস। নিজস্ব চিত্র।

অচিন্ত্য যদি জহরত হন, অষ্টম দাস তবে জহুরি। তাঁর আখড়াতেই ভারোত্তোলনে অচিন্ত্যের হাতেখড়ি। জমি-জায়গা বিক্রি করে অষ্টম আখড়ায় যন্ত্রপাতি কিনেছেন। প্রশিক্ষণ নিতে আসা গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের থেকে টাকা নেন না বছর আটচল্লিশের ‘দ্রোণাচার্য’। নিজে দিনমজুরি করেন। ছাত্রের প্রতিভা দেখে গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে তিনিই অচিন্ত্যকে পুণের সেনা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দিয়ে এসেছিলেন।

এখানে খামতি কোথায়? এই প্রশ্নে কমলাকান্ত, সুখেনের কথারই প্রতিধ্বনী অষ্টমের গলায়। গরিব পরিবারের প্রতিভাধর ছেলেদের উৎসাহ দিতে সরকার কেন সাহায্য করে না, পাল্টা সেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি। বলেন, ‘‘আখড়া চালাতে এক পয়সাও সরকারি সহায়তা পাইনি। অথচ, অনেক ছেলেমেয়ের প্রতিভা আছে। এখানে অনুশীলন করে অনেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য পেয়েছে, চাকরি করছে। কিন্তু, আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য পেতে হলে সরকারকে নজর দিতেই হবে। উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমি নিজেই বঞ্চনার বড় উদাহরণ। দিনমজুরি করে ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। অথচ, আমার একটা চাকরির জন্য কত জনকে বলেছি। কেউ শোনেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CWG 2022 Achinta Sheuli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE