ভোটের ময়দানে তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু শ্রমিকদের প্রতি ‘বঞ্চনা’র প্রতিবাদে বুধবার হুগলির কুন্তীঘাটে কেশোরাম রেয়ন কারখানার বাইরে একসঙ্গে গেটসভা করল তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপির শ্রমিক সংগঠন।
আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। বিভিন্ন ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধিতার সুর চড়ছে। এই পরিস্থিতিতে এখানে তিন দলের শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক-স্বার্থে ‘হাত মেলানোয়’ বহু শ্রমিক খুশি। তৃণমূলের আইএনটিটিইউসি, বিজেপির বিএমএস, সিপিএমের সিআইটিইউ’র সঙ্গে গেটসভায় ছিল কংগ্রেসের আইএনটিইউসি, সিপিআইয়ের এআইটিইউসি। পাঁচ সংগঠনেরই বক্তব্য, শ্রমিকদের পাশে থাকতে তারা একযোগে লড়াই করছে।
গেটসভায় শ্রমিক-নেতাদের দাবি, এখানে ১৯৭০ সালের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী কাজ হত। ইদানীং সেই চুক্তি লঙ্ঘন করছেন মালিকপক্ষ। বিভিন্ন সরকারি ছুটির দিনে (বছরে ১১টি) সবেতন ছুটি মিলত। সংশ্লিষ্ট দিনে কোনও শ্রমিক কাজ করলে তিন দিনের মজুরি পেতেন।
গত ১৫ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষ নোটিস দেন, ছুটির দিনে কাজে ৩ নয়, ২ দিনের মজুরি মিলবে। ওই নির্দেশে অসন্তুষ্ট শ্রমিকদের একটি বড় অংশ ২৬ জানুয়ারি কাজে যাননি। এর পরে কর্তৃপক্ষ ছুটির দিনের ক্ষেত্রে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ নোটিস দেন। অভিযোগ, ওই দিন প্রতিবাদকারী শ্রমিক-আবাসনের বিদ্যুৎ, জল সাড়ে ১০ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়।
কারখানা ইউনিটের সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক কুমুদরঞ্জন মালোর বক্তব্য, ‘‘শ্রমিকদের একটাই দাবি, ত্রিপাক্ষিক চুক্তিকে মান্যতা দিন কর্তৃপক্ষ।’’ নগেন্দ্রপ্রসাদ যাদব নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ এ ভাবে চাপ সৃষ্টি করলে আমরা কী ভাবে কাজ করব?’’
শ্রমিক সংগঠগুলির নেতৃত্বের অভিযোগ, তাঁরা যাতে কারখানার সামনে কোনও আন্দোলন করতে না পারেন, সে জন্য নেতাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার মতো পদক্ষেপ করছেন কারখানার মালিকপক্ষ। ফোন না ধরায় কারখানা কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
যুযুধান বিভিন্ন দলের শ্রমিক সংগঠনের একত্রে লড়াই নিয়ে কুমুদের বক্তব্য, ‘‘রাজনীতির ময়দানে আমরা একে অপরের বিরোধী। কিন্তু শ্রমিকের রুটি-রুজির স্বার্থে সবাই এককাট্টা হয়ে লড়ছি। ভবিষ্যতেও লড়ব।’’ একই বক্তব্য ওই কারখানা ইউনিটের আইএনটিটিইউসি সাধারণ সম্পাদক চন্দন রায়, বিএমএস-এর সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় উপাধ্যায়েরও।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)