চাবি তৈরি করে চলেছেন আরতি। চুঁচুড়ায়। নিজস্ব চিত্র
রোজই তিনি আসেন চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ে। বার লাইব্রেরির কাছে মাটিতে বসে চলে তালা খোলার কাজ। চার দশক ধরে রাস্তায় বসেই জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তালডাঙার বৃদ্ধা আরতি পাল। ছুটি নেন না। তাঁর দর্শন, ‘‘একটাই তো জীবন। নিজের জীবনকে নিজেকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, অনেকদিন আগেই বুঝেছি।"
কিন্তু আজ, শুক্রবার নারী দিবস। আজও ছুটি নয়? প্রশ্ন করতেই উড়ে এল জবাব, ‘‘জানি না বাপু। অত জেনেই বা লাভ কী! নারী দিবস বলে ছুটি নেব কেন?’’
বছরের পর বছর অন্যের চাবি তৈরি করে গেলেও নিজের ভাগ্যের চাবি ঘোরেনি আরতির। সরকারি সাহায্য বলতে পেয়েছেন মাসিক হাজার টাকার বার্ধক্য-ভাতা। বহু দৌড়ঝাঁপের পর যা সম্প্রতি চালু হয়েছে। তবে, তাতে কী! একফালি চটের বস্তার উপর বসে নিত্যদিনের অদম্য লড়াইতেই বেঁচে থাকার রসদ পান তিনি।
স্বামী, গোবিন্দর কাছে তালা খোলার হাতেখড়ি আরতির। একটা সময়ে স্বামীর পাশে বসেই কাজ করতেন তিনি। কাজে রপ্ত হওয়ার পর থেকে নিজেই সেখানে বসে কাজ করছেন। কারও বাড়িতে যেতে হলে আগে গোবিন্দ যেতেন। তখন থেকেই দুই ছেলে-মেয়ের দায়িত্ব সামলে ঘষে-মেজে নতুন চাবি তৈরি করে চলেছেন আরতি। ২০১৫ সালে গোবিন্দ মারা যান। তারপর থেকে লড়াইটা আরও শক্ত হয়েছে তাঁর। তবে, এখন মেয়ে বিবাহিত। বাবা-মায়ের কাছ থেকে কাজ শিখে ছেলে রবিও তালা খুলতে পারদর্শী হয়েছেন। গান-বাজনাতেও পটু রবি। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যান। তখন, সাধারণের ভরসা শুধুই আরতি।
বৃহস্পতিবার হলদিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন রবি। তিনি জানান, তাঁর মায়ের জীবনযুদ্ধের কথা। বলেন, "মায়ের লড়াই দেখে আমি প্রথম নারীশক্তি অনুভব করেছিলাম। মা আমার দশভুজা।’’
এ দিন ব্যান্ডেলের শিক্ষিকা অলিভিয়া মণ্ডল তালা নিয়ে এসেছিলেন খুলতে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই নতুন চাবি তৈরি করে ওই তালা খুলে দেন আরতি। অলিভিয়া বলেন, ‘‘এর আগেও একবার চাবি বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। উনি খুব ভাল মানুষ।রাস্তায় বসেই কত মানুষের সমস্যার সমাধান করেন। ওঁকে সেলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy