Advertisement
E-Paper

টিকার লাইনে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন বৃদ্ধ

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর থেকেই হুগলিতে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে।

প্রকাশ পাল , সুশান্ত সরকার 

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২১ ০৮:০৩
অসুস্থ বিনয়বাবু।

অসুস্থ বিনয়বাবু। নিজস্ব চিত্র।

বেলা ১১টা। পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে টিকাকরণের ঘরের সামনে লম্বা লাইন। আচমকাই মাটিতে পড়ে গেলেন এক বৃদ্ধ। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালের ঘরে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সুস্থ হলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভ্যাকসিনের আশায় সোমবার সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা লাইনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বিনয়ভূষণ চট্টোপাধ্যায় নামে ৮৫ বছরের মানুষটি। তিনি বৈঁচীর বাসিন্দা।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর থেকেই হুগলিতে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। ভাইরাসের মোকাবিলায় যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন নিতে চাইছেন মানুষ। কিন্তু ভ্যাকসিনের জোগান স্বাভাবিক হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শহর থেকে গ্রাম— সর্বত্রই টিকাকরণ কেন্দ্রের সামনে ভিড় উপচে পড়ছে। রোদে গলদঘর্ম হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে বয়স্কদের। ছাউনি না-থাকায় কোথাও কোথাও খোলা আকাশের নীচেই চলছে অপেক্ষা। টানা দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে অনেকে মাটিতেই বসে পড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে বয়স্কদের জন্য টিকাকরণ কেন্দ্রের সামনে ন্যূনতম স্বাচ্ছ্যন্দের ব্যবস্থার দাবি উঠছে।

পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল সূত্রের খবর, এখানে দৈনিক ৩০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে ২৫০ জনকে দ্বিতীয় এবং ৫০ জনকে প্রথম ডোজ় দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ২৬ হাজারের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের টিকাকরণের ঘরের সামনে ভোর থেকেই লম্বা লাইন পড়ছে। এখানে অবশ্য মাথার উপরে ছাউনি রয়েছে। তাতেও দীর্ঘ সময় ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর বলে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য।

এ দিনও ভোর থেকে সেখানে লাইন পড়ে। সেই ভিড়ে অনেকেই ছিলেন ষাটোর্ধ্ব। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ভ্যাকসিনের জন্য কাউন্টার খোলা হয়। বিনয়বাবুর সঙ্গে ছিলেন তাঁর আত্মীয় অলোক রায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ লাইন দিই। ১১টা নাগাদ উনি মাথা ঘুরে পড়ে যান।’’

এর পরে বিনয়বাবুকে হাসপাতালের ঘরে নিয়ে গিয়ে শুশ্রুষা করা হয়। স্যালাইন দেওয়া হয়। সুস্থ হলে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। তার পরে তিনি বাড়ি ফিরে যান। তিনি এ দিন দ্বিতীয় ডোজ় নিলেন। এই ঘটনার পরে অনেকেরই বক্তব্য, গোটা ব্লক থেকে বয়স্ক মানুষজন এখানে ভ্যাকসিন নিতে আসছেন। তাঁদের অসুবিধার কথা ভেবে পাখা লাগানোর বন্দোবস্ত করা উচিত।

সমস্যার কথা মানছেন ব্লক প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। প্রশাসনের এক আধিকারিকের আশ্বাস, আজ, মঙ্গলবার থেকে ভ্যাকসিনের লাইনে পাখা লাগানোর বন্দোবস্ত করা হবে। আশাকর্মীরা থাকবেন প্রবীণ মানুষদের সহযোগিতা করার জন্য।

তবে, অব্যবস্থার চিত্র জেলার অনেক জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে। শ্রীরামপুরের মাহেশে টিকাকরণ কেন্দ্রের সামনে এ দিন দীর্ঘ লাইন ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কেউ কেউ ভোর হওয়ার আগে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। তখন থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন সকালের খর রোদের মধ্যেও। খোলা আকাশের নীচেই। অপেক্ষমাণ নাগরিকদের অনেকেই ষাটোর্ধ্ব, অশক্ত।

এক প্রৌঢ় দম্পতি সেখানে সকাল সাতটা থেকে লাইন দিয়েছিলেন দ্বিতীয় ডোজ় নিতে। নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকের পিছনে থাকায় এ দিন তাঁদের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। বেলা ১১টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়ানোর পরে তাঁরা বাড়ি ফিরে আসেন। তাঁদের কথায়, ‘‘এই ভাবে গলদঘর্ম হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দেওয়া সম্ভব! তা ছাড়া, এত ভিড়ে তো ভ্যাকসিনের লাইনেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই থাকছে না। প্রশাসন একটু দেখুক।’’

নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকের পিছনে থাকায় রোজকার মতোই এ দিনও পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল থেকেও ভ্যাকসিন না পেয়েই ফিরতে হল অনেককে।

Corona Coronavirus in West Bengal COVID-19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy