Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Baidyabati

Co-operative Banks: বহু কোটি ঋণ বকেয়া, ব্যাঙ্কের গলায় ফাঁস

ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, বাম আমলে বৈদ্যবাটী এবং চাঁপদানি পুরসভার অনেক কর্মী এই ব্যঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন।

বৈদ্যবাটী- শেওড়াফুলি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক। নিজস্ব চিত্র

বৈদ্যবাটী- শেওড়াফুলি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক। নিজস্ব চিত্র

কেদারনাথ ঘোষ
শেওড়াফুলি শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২২ ০৭:০৫
Share: Save:

ঋণ বাবদ বেশ কয়েক কোটি টাকা আদায় হয়নি। অনাদায়ী ঋণ কার্যত ফাঁস হয়ে বসেছে বৈদ্যবাটী-শেওড়াফুলি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের গলায়!

এই সমবায় ব্যাঙ্ক নানা সমস্যায় জর্জরিত। তিন দশক নির্বাচন হয়নি। পরিচালন কমিটি নেই। কাজ চালাচ্ছেন প্রশাসক। ঋণের টাকা আদায় না হওয়ায় সঙ্কট বেড়েছে। তবে, ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষের দাবি, সাধারণ গ্রাহকদের পরিষেবায় আঁচ পড়বে না। গচ্ছিত টাকা বা সুদ, নির্দিষ্ট সময়েই গ্রাহক পাচ্ছেন বা পাবেন। আমানতকারীদের টাকা সুরক্ষিত।

ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, বাম আমলে বৈদ্যবাটী এবং চাঁপদানি পুরসভার অনেক কর্মী এই ব্যঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। তাঁদের ঋণ শোধের দায়িত্ব নেয় সংশ্লিষ্ট পুরসভা। এ জন্য ওই কর্মীদের থেকে মাসিক কিস্তিতে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকাও পুরসভা কেটে নেয়। কিন্তু, সেই টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়েনি। ফলে, সুদে-আসলে টাকার অঙ্ক বেড়েই চলেছে। বৈদ্যবাটী পুরকর্মীদের ক্ষেত্রে ২০০৩ সাল পর্যন্ত অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩ কোটি টাকায়। ২০০৩ সাল পর্যন্ত চাঁপদানি পুরসভার কর্মীদের নেওয়া ঋণ বাবদ ওই পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাঙ্কের পাওয়া ছিল প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা। এখন তা প্রায় ২ কোটিতে পৌঁছেছে।

ওই টাকা আদায়ের জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে চিঠি পাঠায়। ওই দফতর দুই পুরসভায় চিঠি দেয়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাতেও দুই পুরসভা নীরব।

ব্যাঙ্কের স্পেশাল অফিসার জিতেন্দ্রর সিংহ বলেন, ‘‘ফের পুরমন্ত্রী এবং সমবায়মন্ত্রীকে জানাব। কাজ না হলে আইনের পথে যাব। না হলে, ব্যাঙ্ককে বাঁচাতে পারব না।’’ ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের দাবি, ঋণের টাকা পুনরুদ্ধার না হওয়ায় ন’মাস আগে পর্যন্ত ব্যাঙ্ক প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসানে চলছিল। কিছু ঋণ খেলাপির থেকে এই কয়েক মাসে প্রায় ৭ কোটি আদায় করা গিয়েছে। ফলে, খারাপ পরিস্থিতি কিছুটা কেটেছে। এখনও সব মিলিয়ে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা অনাদায়ী রয়েছে।

বৈদ্যবাটী পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মী বলেন, ‘‘ওই ব্যাঙ্ক থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। শোধ হয়নি শুনে অবাক হচ্ছি। কারণ, মাসিক বেতন থেকে ঋণের পুরো টাকাই অনেক আগেই পুরসভাকে দেওয়া হয়ে গিয়েছে।’’ চাঁপদানি পুরসভার সাফাই বিভাগের কর্মী কানাইয়া বাশফোড় বলেন, ‘‘১৯৮৯ সালে মেয়ের বিয়ের জন্য ৩২ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। প্রতি নাসে মাইনে থেকে ১৩৬৫ টাকা পুরসভা কেটে নিত। ২০০৫ সালে পুরো টাকা শোধ করে ফেলেছি। অথচ, সেই টাকা ব্যাঙ্কে জমাই পড়েনি! ঋণের জামিনদার পুরপ্রধান। পুরসভাটাকা মেটাবে।’’

বৈদ্যবাটীর পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের ঋণ শোধের চিঠি পাইনি। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করব।’’ চাঁপদানির পুরপ্রধান সুরেশ মিশ্র বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের ঋণ শোধের বিষয়ে কোনও চিঠি আমার হাতে আসেনি। ২০০৫ সালে পুরপ্রধান হওয়ার পরে দেখি, পুরকর্মীদের ৫ কোটির বেশি টাকা বকেয়া। সেই পরিমাণ ৭০-৭৫ লক্ষ টাকায় নামিয়ে আনতেপেরেছি। ওই বকেয়া পুরো মেটানোর পরে ব্যাঙ্কের টাকা শোধের দিকেনজর দেব।’’

তাঁর সংযোজন, ‘‘পুরসভার দিকে ব্যাঙ্কের নজর পড়ল, ঠিক আছে। যে সব লোক বা প্রোমোটার কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বসে আছেন, তাদের নামও প্রকাশ্যে আনা হোক।’’ এ ব্যাপারে ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সমস্ত ঋণ খেলাপির থেকেই টাকা আদায়ের চেষ্টা চলছে। কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের সম্পত্তি নিলামের প্রক্রিয়াও চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Baidyabati Cooperative Banks Bank Loans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE