Advertisement
২৫ মে ২০২৪
Uluberia Police Station

উলুবেড়িয়া থানা নিয়ে হঠাৎই শোরগোল

বিষয়টা কী নেহাতই কথার কথা, না ভেবেচিন্তেই এমন উদাহরণ টেনেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়? স্কুলে নিয়োগ-দুর্নীতির তদন্তভার সিবিআইকে না দিয়ে উলুবেড়িয়া থানাকে দিলেই ভাল হত বলে এজলাসে মন্তব্য করেছেন তিনি। বস্তুত সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করতে গিয়েই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এ হেন মন্তব্য। কিন্তু তাঁর কথায় শোরগোল পড়েছে স্থানীয় মহলে। এই সূত্রেই গত কয়েক বছরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় উলুবেড়িয়া থানার ভূমিকা খতিয়ে দেখলেন আমাদের প্রতিবেদক। 

উলুবেড়িয়া থানা।

উলুবেড়িয়া থানা। —নিজস্ব চিত্র।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫২
Share: Save:

নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআইয়ের ভূমিকার সমালোচনা করতে গিয়ে মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে উলুবেড়িয়া থানার তুলনা টেনেছেন। আক্ষেপের সুরে বলেছেন, সিবিআইয়ের পরিবর্তে উলুবেড়িয়া থানাকে এই তদন্ত করতে দিলে ভাল হত।

বিচারপতির এই মন্তব্যে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ মহলে শোরগোল পড়েছে। পুলিশের কোনও কর্তা প্রকাশ্যে অবশ্য মন্তব্য করেননি। তবে পুলিশ আধিকারিকদের একটি বড় অংশের মধ্যে ওই থানার ভূমিকা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। এক দিকে আছে নানা সমালোচনা। পুলিশের অন্য অংশের মধ্যে প্রচ্ছন্ন
গর্ব উঠে এসেছে বিচারপতি এই থানাকে সিবিআইয়ের সঙ্গে
তুলনা করায়।

পুলিশ আধিকারিকদের একাংশের কাটাছেঁড়ায় উঠে এসেছে, ২৮ অগস্টের একটি ঘটনা। ওই রাতে উলুবেড়িয়ায় এক প্রোমোটার এবং তার দলবলের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীকান্ত গায়েন নামে এক ব্যক্তিকে খুন এবং তাঁর স্ত্রী বন্দনাকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, ওই পরিবার পুলিশকে বার বার প্রোমোটারের হুমকির কথা জানানোর পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি এত দূর গড়ায়, ৬ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের বিচারপতি হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার স্বাতী ভাঙ্গালিয়া এবং উলুবেড়িয়া থানার আইসি রামশঙ্কর ওঝাকে এজলাসে ডেকে পাঠান। এই মামলায় গাফিলতির অভিযোগে থানার এক আধিকারিককে পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ়’ করা হয়।

পুলিশ আধিকারিকদের এই অংশের বক্তব্য, ওই ঘটনায় অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে উলুবেড়িয়া থানার ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন রয়েছে, হাই কোর্টে এসপি এবং এবং আইসিকে ডেকে পাঠানোর মধ্যে দিয়েই তা প্রমাণিত। তাঁরা মনে করেন, সিবিআইয়ের ভূমিকার সমালোচনা করতে গিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছেন, তাকে এই থানার শংসাপত্র হিসাবে না দেখে নিজেদের ব্যর্থতাগুলি আরও খুঁটিয়ে দেখা দরকার। তাঁদের আরও বক্তব্য, সাধারণ মানুষের নানা অভিযোগ আছে এই থানার বিরুদ্ধে। শহরে পুলিশের নাকের ডগায় রমরমিয়ে চলছে সাট্টা। মদাই গ্রামে তৈরি হচ্ছে চোলাই মদ। যত্রতত্র চলছে প্রকাশ্যে মদ্যপান। পুলিশ নীরব দর্শক।

গ্রামীণ জেলা পুলিশের অন্য একটি অংশ এই সব অভিযোগ মানেনি। তাঁদের বক্তব্য, যে ঘটনার প্রেক্ষিতে এসপি এবং আইসিকে হাই কোর্টে ডেকে পাঠানো হয়েছিল, তাতে মূল অভিযুক্ত-সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহতের পরিবারকে পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। সাট্টা, প্রকাশ্যে মদ্যপান বন্ধে, চোলাইয়ের ভাঁটি ভাঙতে নিয়মিত অভিযান চালানো হয় বলেও তাঁদের দাবি।

উল্লেখ্য, বছর তিনেক আগে উলুবেড়িয়া থানাকে ভেঙে দু’ভাগ করা হয়েছে। কিছুটা অংশ নিয়ে রাজাপুর থানা গঠিত হয়। ফলে উলুবেড়িয়া থানার আয়তন অনেকটাই কমেছে।

গ্রামীণ জেলা পুলিশের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, উলুবেড়িয়া থানায় প্রতিটি অভিযোগের ক্ষেত্রেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উলুবেড়িয়া মহিলা থানাও অনেক অভিযোগ পাঠিয়ে দেয় উলুবেড়িয়া থানায়। সেই সব অভিযোগও যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয়। প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হয়।

হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিকের বক্তব্য, সাফল্য ও ব্যর্থতা মিলিয়েই জেলার অন্য থানাগুলির মতো উলুবেড়িয়া থানাও কাজ করে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য উলুবেড়িয়া থানাকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। তবে সে জন্য থানার কাজে কোনও প্রভাব পড়বে না।

সিপিএম, বিজেপির মতো বিরোধী দলের নেতাদের অভিযোগ, তৃণমূলের সঙ্গে যোগসাজসে এই থানায় বসে বিরোধীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর পরিকল্পনা করা হয়। তৃণমূল বা পুলিশ সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uluberia CBI Calcutta High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE