খানাকুল বন্দর বাস স্ট্যান্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ত্রাণ শিবির। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।
জল এখনও পুরো নামেনি। খানাকুলের বন্যাদুর্গতদের অবস্থারও বিশেষ উন্নতি হয়নি।
‘‘নৌকা করে এসে খালি ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন নেতা, ব্লক ও পঞ্চায়েতের লোকেরা। চাল, চিঁড়ে তো ছাড়, একটা ত্রিপলও অধিকাংশ পরিবার পাইনি।’’— ত্রাণের প্রসঙ্গ তুলতেই বুধবার ঝাঁঝিয়ে উঠলেন কাগনান গ্রামের অর্চনা ভৌমিক।
খানাকুল-২ ব্লকের ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যবয়স্ক ওই মহিলার খেদ, ‘বন্যা এখানে নতুন নয়। আমাদের মতো দিনমজুর পরিবারও বন্যার কথা ভেবে ৫-৭ দিনের মতো কিছু খাবার সরঞ্জাম মজুত রাখি। এ বার এলাকায় বাঁধ ভেঙে বন্যার ১২ দিনের মাথাতেও জল নামেনি। সরকারি ত্রাণও আসেনি। আমরা কী ভাবে থাকছিস কারও মাথাব্যথা নেই।” একই গ্রামের কল্পনা দোলুই, অভিরাম বাউরিরা বলেন, “যে খাবার একবারে খেতাম, সেই খাবারই এখন বাচ্ছাদের নিয়ে তিন বার খাচ্ছি। গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ নেই। পানীয় জল আনতে হচ্ছে অনেক দূর থেকে।”
ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ খানাকুলের প্রায় সর্বত্র। ক্ষোভ-বিক্ষোভও দেখা দিয়েছে। খানাকুল-২ ব্লকেরই মাড়োখানা পঞ্চায়েতের ঢলডাঙা গ্রামের নিতাই মণ্ডলের অভিযোগ, “ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েতের সাহায্যের হাত এখনও পৌঁছয়নি। শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের কাছে ত্রাণের দাবি করলে বিনা পয়সায় রেশনে চালের কথা বলছেন। অথচ, চাল ছাড়াও ত্রিপল, শুকনো খাবার, পোশাক, শিশুখাদ্য— কত কিছুই তো দরকার।” খানাকুল-১ ব্লকের কিশোরপুর-১ পঞ্চায়েতের বন্দিপুরের দুর্গত নিমাই বেরার অভিযোগ, “দ্বারকেশ্বরের প্রথম বাঁধটি ভাঙে আমাদের গ্রামে। উঁচু জায়গাতে উঠে গিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও গ্রামের ৩২৫টি পরিবারই জলমগ্ন হয়ে সর্বহারা হয়েছি। এখনও পর্যন্ত ৪০টি ত্রিপল আর বাঁধ ভাঙার দিনে একবস্তা (৫০ কেজি) চাল পেয়েছি।’’
কিশোরপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রধান সন্দীপ বর সরকারি ত্রাণের অপ্রতুলতার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা সরকারি ত্রাণের প্রত্যাশা করে বসে নেই। সর্বত্র ত্রাণ পৌঁছে দিতে বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠনের সাহায্য নিচ্ছি। ত্রাণ সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পেলেই যে ভাবে হোক ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বন্দিপুরেও ব্যবস্থা হবে।”
খানাকুল-২ ব্লকের জগৎপুর পঞ্চায়েতের প্রধান প্রভাস সাউ বলেন, ‘‘এলাকার ১৭টি সংসদে প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা রয়েছেন। ত্রিপল পেয়েছি ৯০০, চাল পেয়েছি ৭০ কুইন্টাল, চিঁড়ে আড়াই কুইন্টাল, গুড় ১ টিন, শিশুখাদ্য ২৪ প্যাকেট। সবাই ত্রাণের দাবি করছেন। কিন্তু প্রকৃত দুঃস্থদের বেছে বেছে ত্রাণ সামগ্রী দিচ্ছি।”
দুই ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বস্ত ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েত। প্রধান দিলীপ সানকি সরকারি ত্রাণের অপ্রতুলতা নিয়ে সরাসরি অভিযোগই করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এখানে সকলের ত্রাণ প্রয়োজন। সে তুলনায় কিছুই পাচ্ছি না ব্লক থেকে। মানুষ পঞ্চায়েতে এসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তিনি জানান, এলাকায় প্রায় ৫ হাজর পরিবারের সব বাড়ি একতলা পর্যন্ত ডুবে রয়েছে। মাটির বাড়ির একটিও অবশিষ্ট নেই। অনেকেই বাড়ির ছাদে থাকছেন। এই অবস্থা অন্তত ৩ হাজার ত্রিপলের জায়গায় এখনও অব্দি ৯৭৫টি মিলেছে। চাল মিলেছে ৯৪১ বস্তা।
যা দিয়ে ৫ হাজার পরিবারের এক সপ্তাহ চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy