হাওড়ার পোড়া মঙ্গলাহাটের জমি রাজ্য সরকারের। ২০২৩ সালে দ্বিতীয় বার পুড়ে যাওয়া ওই হাটের দক্ষিণ প্রান্তে ঝোলানো এই সংক্রান্ত দু’টি নোটিস ঘিরে শুক্রবার দিনভর তোলপাড় চলল হাটের স্টল-মালিক ও হাট ব্যবসায়ী সমিতির মধ্যে। তাঁদের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে কেউ বা কারা এই নোটিস সেঁটে পালিয়েছে। এটা ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পিত চক্রান্ত। যদিও জেলাশাসক পি দীপাপ প্রিয়া বলেন, ‘‘ওই নোটিস আমরাই দিয়েছি। পোড়া মঙ্গলাহাটের ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দিতে ওই জায়গায় ছ’তলা বহুতল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) প্রায় প্রস্তুত। মাটি পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। এক মাসের মধ্যেই শুরু হবে কাজ।’’
২০২৩ সালের ২০ জুলাই গভীর রাতে মঙ্গলাহাটে বিধ্বংসী আগুন লাগে। পরদিন, ২১ জুলাইয়ের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি পোড়া মঙ্গলাহাটে
এসে ঘোষণা করেন, যে জমিতে হাট বসে, সেটি রাজ্য সরকারের হলে তারা সেখানে বহুতল বানিয়ে দিতে পারে। আর যদি দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট জমিটি লিজ়ে আছে, তা হলেও সেই জমি সরকার অধিগ্রহণ করতে পারে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘোষণা মতো রাজ্য সরকারের ‘এস্টেট অ্যাকুইজ়িশন অ্যাক্ট, ১৯৫৩’ অনুযায়ী জমিটি সরকারি জমি হিসাবে গণ্য করে সেখানে একটি বহুতল বাজার কমপ্লেক্স তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেখানে পার্কিং, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা-সহ সব ধরনের আধুনিক বন্দোবস্ত থাকবে।
জেলাশাসক এ দিন বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, পোড়া মঙ্গলাহাটের জায়গায় ছ’তলা বহুতল হবে। প্রয়োজনে তল বাড়ানো হবে। হাট ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে, যাতে কাজ চলাকালীন ওই জায়গায় এক পাশে ব্যবসায়ীরা বসতে পারেন।’’ তিনি জানান, রাস্তায় যে হাট বসে, সেই ব্যবসায়ীদেরও যাতে ওই বহুতলে জায়গা দেওয়া যায়, সেই পরিকল্পনাও রয়েছে।
এ দিকে, সরকারি নোটিস দেওয়ার খবর শুনেই এ দিন পোড়া মঙ্গলাহাটে চলে আসেন মনসুর আলি লস্কর ওরফে বাবুলাল নামে এক ব্যবসায়ী। তাঁর দাবি, ২০০১ সালে তৎকালীন জেলাশাসকের হস্তান্তর করা হাটের ১৬৮ কাঠা জমি তাঁর এবং গজানন শ্রীরাম এজেন্সি নামে একটি সংস্থার নামে রয়েছে। তাই জমিটি রাজ্য সরকার এ ভাবে নিয়ে নিতে পারে না।
হাওড়া পুরসভায় জমা দেওয়া জমির সম্পত্তিকরের বিল দেখিয়ে বাবুলাল বলেন, ‘‘জমিটি আমাদের নামে না হলে কী ভাবে পুরসভায় সেটির মিউটেশন হল? বছর বছর কী ভাবে তারা সম্পত্তিকর নিল?’’ একই সঙ্গে তিনি অবশ্য স্বীকার করেন, ‘‘পুরসভায় মিউটেশন হলেও ভূমি-রাজস্ব দফতরে এখনও জমিটির মিউটেশন হয়নি।’’
প্রশ্ন হচ্ছে, ভূমি-রাজস্ব দফতরে মিউটেশন না হলে পুরসভা কী ভাবে মিউটেশন করল? এ ব্যাপারে হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা ভূমি-রাজস্ব দফতরের সঙ্গে কথা বলব। জমির মালিকানা নিয়ে যথাযথ নথিপত্র না থাকলে ওই ব্যবসায়ী এবং সংস্থার থেকে আর সম্পত্তিকর নেওয়া হবে না।’’
এ দিন মঙ্গলাহাটের জমির দাবিদার দু’টি সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের পরে হাওড়া হাট ব্যবসায়ী সমিতি (সেন্ট্রাল)-র সভাপতি মলয় দত্ত ও সম্পাদক রাজকুমার সাহা বলেন, ‘‘এই জমিতে রাজ্য সরকার বহুতল করলে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু জমির মালিকানার আইনি জটিলতায় পড়ে যদি হাট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, সেটা আমরা মানব না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)