ঝালাই কারখানা, গাড়ির গ্যারাজে অক্সিজেন সরবরাহ করেন ডানকুনির নইম সরকার। তিনি এখন অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠাচ্ছেন হাসপাতালে।
নইম একা নন, হুগলি জেলায় শিল্পক্ষেত্রে অক্সিজেন সরবরাহকারী অনেক ব্যবসায়ী করোনা-কালে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ‘প্রাণবায়ু’ জোগানোর কাজে নেমেছেন। তাতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ‘টানাটানির সংসারে’ কিছুটা সুরাহা হয়েছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তা।
হুগলিতে এখনও কোনও সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট নেই। বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে একমাত্র গণ-উদ্যোগে তৈরি শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে আছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পরে অক্সিজেন প্লান্টের অভাব রীতিমতো মালুম হচ্ছে। বহু সংক্রমিতের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। প্রাণ সংশয় হচ্ছে। এই ধরনের রোগীকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ফলে, অক্সিজেনের চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, সিলিন্ডারের অভাবে অক্সিজেনের পর্যাপ্ত জোগানে সমস্যা হচ্ছিল।
সম্প্রতি শিল্প ক্ষেত্রে অক্সিজেন সরবরাহকারী কিছু ব্যবসায়ী জেলা স্বাস্থ্য দফতরে আবেদনে জানান, সঙ্কট মেটাতে তাঁদের সাময়িক ভাবে হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের অনুমতি দেওয়া হয়। পরিস্থিতি বুঝে তার পরেই ওই ছাড়পত্র দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডার নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পরিশুদ্ধ করে তবে চিকিৎসার জন্য ব্যবহারের উপযোগী করা হচ্ছে।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শিল্প ক্ষেত্রের অক্সিজেন সিলিন্ডারকে মেডিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডারে রূপান্তরের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থায় এখনও পর্যন্ত ৪৫০টি
সিলিন্ডার বেড়েছে।’’
নয়া ব্যবস্থায় ঘাটতি কিছুটা মিটছে বলে জানিয়েছেন জেলায় অক্সিজেনের দায়িত্বে থাকা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (১) জয়রাম হেমব্রম। তিনি জানান, সঙ্কট মেটাতে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহকারী আরও একটি সংস্থার কাছ থেকে ব্যান্ডেল ইএসআই, সিঙ্গুর ট্রমা কেয়ার এবং চন্দননগর কোভিড হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ওই তিন হাসপাতালে প্রতিদিন চাহিদা গড়ে ২৭০ সিলিন্ডার। ঘণ্টায় ১০-১২টি সিলিন্ডার শেষ হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত
সামলানো যাচ্ছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, যে হাসপাতালগুলিতে অন্তর্বিভাগ রয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্য দফতরের সব মিলিয়ে ৬২৯টি ‘ডি টাইপ’, অর্থাৎ, বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। ‘বি টাইপ’, অর্থাৎ, ছোট সিলিন্ডার আছে ১৩৬৫টি। ঘাটতি মূলত ছোট সিলিন্ডারেরই।
নইম জানান, তাঁর ২০০টি সিলিন্ডার রয়েছে। সব ক’টিই হাসপাতালে পাঠানোর কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মতো অনেক ব্যবসায়ী আছেন। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে তাঁরাও যাতে এগিয়ে আসেন, সেই আবেদন রেখেছি।’’ আরামবাগের বাসুদেবপুর থেকে অক্সিজেন সরবরাহকারী, ব্যবসায়ী দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এখন আমাদের ব্যবসা কার্যত বন্ধ। ফলে, সিলিন্ডার হাসপাতালে পাঠাতে কোনও সমস্যাই নেই। তাতে অনেকের প্রাণ বাঁচবে।’’ দিলীপবাবু তাঁর ৫০টি সিলিন্ডারই পরিশুদ্ধ করতে পাঠিয়েছেন।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, সঙ্কট মেটাতে চুঁচুড়া ইমামবাড়া সদর, শ্রীরামপুর ওয়ালশ, সিঙ্গুর ট্রমা কেয়ার এবং আরামবাগ হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উত্তরপাড়ার বিদায়ী পুরপ্রধান দিলীপ যাদব জানিয়েছেন, পুরসভা-পরিচালিত মহামায়া হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির চেষ্টা চলছে।
এ দিকে, ডানকুনিতে অক্সিজেন সরবরাহকারী একটি সংস্থার বিরুদ্ধে ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক সম্রাট চক্রবর্তীকে স্মারকলিপি দিয়ে কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের হুগলি শাখার তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, সংস্থাটি ইচ্ছাকৃত ভাবে দীর্ঘক্ষণ বেসরকারি হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডার ভর্তি না করে আটকে রাখছেন। এতে সঙ্কটজনক রোগীর প্রাণ সংশয় হচ্ছে।