নাড়া পোড়ানো চলছে। শনিবার। গোঘাটের মুল্লুক মাঠে। নিজস্ব চিত্র।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা, দফায় দফায় সচেতনতা প্রচারের পরেও হুগলিতে এ বারেও নাড়া পোড়ানোর প্রবণতা রোধ করা গেল না। সপ্তাহখানেক ধরেই গোঘাট, আরামবাগ, পুরশুড়া, বলাগড়, তারকেশ্বর, ধনেখালি ইত্যাদি এলাকার বিভিন্ন মাঠে নাড়া পোড়ানো শুরু হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, যন্ত্রের (কম্বাইন হার্ভেস্টার) সাহায্যে ধান কাটার পরে অবশিষ্ট খড় পুড়িয়ে জমি সাফ করা হচ্ছে।
শনিবার সকালে গোঘাট ২ ব্লকের সাতবেরিয়া, মুল্লক, শ্যামবাজার, বদনগঞ্জ-সহ কয়েকটি এলাকায় জমিতে নাড়া পুড়তে দেখা গেল। যদিও সংশ্লিষ্ট জমির চাষিদের একাংশের দাবি, রাতের অন্ধকারে কে আগুন ধরিয়েছে, তাঁদের জানা নেই। তবে অনেক চাষি স্বীকারও করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, জেলায় প্রচলিত আম্রপালি বা স্বর্ণমাসুরি ধান ফলতে ১৪০-১৪৫ দিন সময় লাগে। তা কাটতে নভেম্বরের ২০-২২ তারিখ
হয়ে যায়। জেলার গুরুত্বপূর্ণ
অর্থকরী ফসল আলুর বীজ লাগানোর উপযুক্ত সময় নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি। একান্তই না হলে মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে বীজ রোপণ করতেই হয়। তাই তড়িঘড়ি জমি পরিষ্কার করতে নাড়া পুড়িয়ে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। চাষে দেরি হলে নাবিধসা রোগে আলু নষ্ট হয়।
আমন ধান কাটার পরে চাষিদের অনেকেই একই জমিতে আলু চাষের জন্য নাড়া পোড়ান। কিন্তু সেই ধোঁয়ায় দূষণ ছড়ায় এলাকায়। পরিবেশ সচেতন স্থানীয় মানুষেরা কেউ কেউ বিষয়টি কৃষি দফতরের নজরেও এনেছেন। কিন্তু দফতর থেকে তদন্তে গেলেও কোনও আইনি পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে।
আরমবাগের একটি পরিবেশ সংগঠনের সম্পাদক মঙ্গল সাউয়ের মতে, “কৃষি দফতর প্রচার করলেও দোষী চাষিদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ না করলে নাড়া পোড়ানো
বন্ধ হবে না।”
জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রিয়লাল মৃধা বলেন, “আইনি পদক্ষেপ করা না হলেও টানা প্রচার চলছে। সর্বত্র সভা ও লিফলেট বিলি চলছে। পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, খড় জড়ো করে জমির এক
কোণে রাখার। চাষিরা আগের চেয়ে সচেতনও হয়েছেন।”
ওই কৃষিকর্তা আরও জানান, এখন জমিতে পড়ে থাকা খড় তুলে তা মণ্ড করে অন্যত্র সরিয়ে রাখার জন্য ‘ব্যালার’ নামে যন্ত্রটিও বাজারে এসে গিয়েছে। দফতরের লোকবলের অভাবে মাঠে গিয়ে নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না। সচেতনতার উপরেই বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। নাড়া পোড়ালে পরিবেশ বা জমির কী ক্ষতি হয় তা নিয়ে জন-সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় মানুষ এবং পঞ্চায়েতগুলির সহযোগিতাও পাওয়া যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy