Advertisement
১৭ জুন ২০২৪
Dengue

মৃত্যু বালকের, ডেঙ্গি পরিস্থিতির অবনতি হাওড়ায়

পুরসভা ও মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার কলকাতার এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় শুভমের। তারও আগে আট নম্বর ওয়ার্ডেরই এক যুবকের প্রাণ কেড়েছিল ডেঙ্গি।

শুভম সরকার

শুভম সরকার নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:১১
Share: Save:

হাওড়ায় ক্রমেই আরও বেশি করে প্রাণঘাতী আকার নিচ্ছে ডেঙ্গি। সম্প্রতি হাওড়া পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডে ফের ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছে ১১ বছরের এক বালক। তার নাম শুভম সরকার। পুরসভা ও মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার কলকাতার এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় শুভমের। তারও আগে আট নম্বর ওয়ার্ডেরই এক যুবকের প্রাণ কেড়েছিল ডেঙ্গি। ডেঙ্গিতে পর পর মৃত্যুর খবরে বাসিন্দারা আতঙ্কিত। পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হওয়ার পরেও প্রশাসন তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে সরব হয়েছেন তাঁরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভমের বাড়ি আট নম্বর ওয়ার্ডের বেলগাছিয়ায়। গত ২২ অগস্ট জ্বর ও ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে তাকে প্রথমে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছিল। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। এর পরে তাকে স্থানান্তরিত করা হয় হাওড়া জেলা হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তার রক্তে প্লেটলেট হু হু করে কমতে থাকে। ছয় ইউনিট প্লেটলেট দেওয়া হলেও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। শেষে তাকে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। সেখানেই ২৭ অগস্ট, শনিবার মারা যায় শুভম। মৃত বালকের কাকিমা রীতা সরকার শুক্রবার ছেলেটির ছবি বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা ঠিক মতো হয়নি। এন আর এসে প্লেটলেট একেবারে নেমে যায়।’’

এ দিন বেলগাছিয়া ভাগাড়ের পাশে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, চার দিকে জমে আছে জল আর আবর্জনা। কিলবিল করছে মশার লার্ভা। পুকুরে ভাসছে ফাঁকা জলের বোতল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঘরে ঘরে জ্বর। এখনও পর্যন্ত এফ রোড, কুঞ্জপাড়া, লিচুবাগানে অন্তত ১০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় একটি ক্লাবের অ্যাম্বুল্যান্স-চালক মিঠুন তুরি বললেন, ‘‘সাত বছর আগে ডেঙ্গি পরিস্থিতি যেমন হয়েছিল, এ বারও তেমন। বৃহস্পতিবারই আমি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত চঞ্চল প্রামাণিক নামে বছর ৪৬-এর এক বাসিন্দাকে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়ে এসেছি।’’

মিতালি পোল্লে নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘‘মশার উপদ্রবে টিকতে পারছি না। গত এক মাসে বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার পরে পুরসভার ঘুম ভেঙেছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা এসে ব্লিচিং পাউডার আর মশা মারার তেল ছড়াচ্ছেন। আগেই ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হত না।’’

এ দিন বিকেলে আট নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুর স্বাস্থ্যকর্মী এবং জঞ্জাল অপসারণ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী। পরে তিনি পৃথক ভাবে বৈঠক করেন জঞ্জাল অপসারণ দফতরের সব ঠিকাদার ও আধিকারিকদের সঙ্গে। দু’টি বৈঠকেই জমা জল সরানো, নিয়মিত নর্দমা পরিষ্কার এবং আর্বজনা সাফাইয়ের উপরে জোর দেওয়া হয়।

চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে ডেঙ্গি মোকাবিলায় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মশার তেল ছড়ানোর জন্য আট নম্বর ওয়ার্ডে ন’জনকে নিযুক্ত করা হয়েছে। এলাকাটি ভাগাড়ের কাছে হওয়ায় ডেঙ্গির আশঙ্কা থাকেই। তাই অতিরিক্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও সুপারভাইজ়ার দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিচ্ছেন। সোমবার থেকে স্বাস্থ্যকর্মী ও জঞ্জাল দফতরের কর্মীদের নিয়ে আমি নিজে প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘুরব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue dengue death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE