বছরের পর বছর প্রকাশ্যেই রমরমিয়ে চলছিল মদ ও মাদকের ঠেক। বছর কুড়ি আগে হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর এলাকার চারু সিংহ লেনের ঘেঁসের মাঠে চলা ওই নেশার ঠেকে মাদক নিয়ে গোলমালের জেরে খুন পর্যন্ত হয়েছিলেন এক যুবক। কিন্তু তার পরেও যে ওই ঠেক বন্ধ হয়নি, তার প্রমাণ মিলল রবিবার রাতে। ওই নেশার ঠেকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ‘অপরাধে’ পাশের নরসিংহ বসু লেনের জেলিয়াপাড়ায় গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, রড, লাঠি নিয়ে আক্রমণ চালাল এক দল বহিরাগত দুষ্কৃতী। অভিযোগ, সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাননি পাড়ার মহিলারাও। মারধরে বাধা দেওয়ায় গৃহস্থদের বাড়ি লক্ষ্য করে মদের বোতল ও ইটবৃষ্টি করে দুষ্কৃতীরা। খবর পেয়ে হাওড়া থানা ও শিবপুর থানা থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। আটক করে কয়েক জন দুষ্কৃতীকে।
আতঙ্কিত বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কারণেই ওই এলাকা থেকে নেশার ঠেক তোলা যায়নি। অভিযোগ অস্বীকার করে অবশ্য পুলিশের দাবি, মাঝেমধ্যেই ঘেঁসের মাঠে হানা দেওয়া হয়। গ্রেফতারও করা হয় মাদকাসক্তদের।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘেঁসের মাঠে নেশা করে পাশেই শিবপুরের জেলিয়াপাড়ায় গিয়ে গোলমাল পাকানো নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কয়েক দিন আগে তার প্রতিবাদ করেছিলেন জেলিয়াপাড়ার দুই যুবক। এর মধ্যে মহম্মদ ফৈয়াজ নামে এক যুবক বলেন, ‘‘কাল রাতে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলাম। সেই সময়ে ঘেঁসের মাঠের একটি ছেলে আমাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে রাস্তায় ধাক্কা মেরে গোলমাল শুরু করে। পরে বাইরের অনেক ছেলে নিয়ে এসে আক্রমণ করে।’’
এলাকাবাসীরা জানান, রবিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ কয়েকশো দুষ্কৃতী এলাকায় ঢুকে মারধর, গোলমাল শুরু করে। বোতল, ইট ছুড়ে মারার পাশাপাশি, বাড়ি বাড়ি ঢুকে তারা যুবকদের মারধরও করে বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার প্রতিবাদে পাড়ার মহিলারা এগিয়ে এলে তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। জেলিয়াপাড়ার বাসিন্দা, আক্রান্ত সামিনা খাতুন বলেন, ‘‘ওরা এসে আমার ছেলে, বছর তেইশের সাহরিয়াজ হোসেনের উপরে হামলা করে। অস্ত্র উঁচিয়ে মারধর করে আমার স্বামী সোয়াব আলিকেও। ওঁর হাতে মারাত্মক চোট লেগেছে।’’
সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সামিনার পরিবার ছাড়াও পাড়ার অনেকেই দুষ্কৃতীদের আক্রমণে অল্পবিস্তর জখম হয়েছেন। এ দিন দুপুরেও প্রত্যেকের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। অমিতাভ দে নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘বছর তিনেক আগে আমি এখানে মদ, গাঁজা খাওয়ার প্রতিবাদ করেছিলাম। তাতে আমাকে মারধর করা হয়। থানায় অভিযোগও জানাই। কিন্তু লাভ হয়নি। নিত্যদিন এখানে বহিরাগতেরা এই কাজ করে চলেছে।’’
যদিও হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘ঘেঁসের মাঠে মাঝেমধ্যেই পুলিশ হানা দেয়, গ্রেফতারও করা হয়। রবিবার কয়েকটি ছেলে মদ খেয়ে মারপিট করেছিল। তেমন কিছু হয়নি। পরে পুলিশ বাহিনী গিয়ে দু’পক্ষকে সরিয়ে দিয়েছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)