এ যেন ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার!
অন্তত হাওড়ার জেলা বন দফতরের অবস্থা অনেকটা সেরকমই। দফতর আছে, কিন্তু নিজস্ব কোনওজমি নেই। দফতরে অভিজ্ঞ আধিকারিক-কর্মীরা আছেন, কিন্তু পর্যাপ্ত গাড়ি বা জন্তু-জানোয়ার উদ্ধারের জন্য আধুনিক গাড়ি নেই। হাওড়া শহরে বেড়ে চলা দূষণের মাত্রা নিয়ে সতর্কতা রয়েছে, কিন্তু বৃক্ষরোপণ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। বছরভর রাজ্য বন দফতর থেকে নানা কর্মসূচি থাকলেও নিজস্ব জমি না থাকায় তা মেনে চলার উপায়ওনেই। প্রতি বছর ঘটা করে অরণ্য সপ্তাহ পালনের জন্য লক্ষ লক্ষটাকা খরচ করে গাছের চারা তৈরি হলেও তা পর্যাপ্ত হারে রোপণের ব্যবস্থাটুকুও নেই।
অভিযোগ উঠেছে, শহরেরদূষণ নিয়ন্ত্রণে হাওড়া বন দফতর নিজেদের দায়িত্ব পালনে অক্ষম হওয়ায় কার্যত দূষণকেই আহ্বান করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, দূষণের দিক থেকে এ রাজ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেহাওড়া। যানবাহন, কল-কারখানার ধোঁয়ায় নিত্যদিন বিষাক্ত হচ্ছেশহরের বাতাস। তার উপরে বেআইনি ভাবে গাছ কাটা, পুকুর বোজানোর জেরে শহরে পরিবেশ দূষণেরমাত্রা ঊর্দ্ধমুখী।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বায়ুসূচক সংক্রান্ত তথ্য বলছে, উত্তর হাওড়ার সালকিয়া, বাঁধাঘাট, মালিপাঁচঘরা, ঘুসুড়ি এলাকায় বর্তমানে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায়দু’তিন গুণ বেশি। পিতল, কাঁসা, লোহা-সহ নানা ধরনের কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়াচ্ছে শহরের বাতাসে। কিন্তু এই বিষাক্ত ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে আজ পর্যন্ত সরকারি তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নিবলে অভিযোগ।
হাওড়া বন বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘শহরে বন দফতরেরনিজস্ব জমি না থাকাটা একটা বড় সমস্যা। তবে তা কাটিয়ে ওঠে বনসৃজনের জন্য বিকল্প ভাবনা নেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে হাওড়ার সমস্ত খাল ও গঙ্গার ধার বরাবর বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা রয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, বৃক্ষরোপণের জন্য সরকারি বিভিন্ন দফতরের পাশাপাশি, হাওড়া পুরসভাকেও অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুরসভা শহরের ৩-৪ কিলোমিটার বৃত্তে কোনও জায়গা দিতে পারেনি। ফলে শহরের দূষণ নিয়ন্ত্রণে বনসৃজনও করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, হাওড়া বন বিভাগের অধীনে মোট চারটি রেঞ্জ রয়েছে— হাওড়া আরবান সোশ্যাল ফরেস্টিং রেঞ্জ, হাওড়া রুরাল সোশ্যাল ফরেস্টিং রেঞ্জ, হুগলি সোশ্যাল ফরেস্টিং রেঞ্জ ও আরামবাগ রেঞ্জ। বন দফতর সূত্রের খবর, আরামবাগের কিছু অংশ ছাড়া বাকি তিনটি রেঞ্জ সম্পূর্ণ ভাবে বনাঞ্চলবিহীন। তবে বনকর্তাদের চিন্তা বেশি হাওড়া আরবান সোশ্যাল ফরেস্টিং রেঞ্জ নিয়ে। কারণ, সেখানে বন দফতরের নিজস্ব কোনও জমি না থাকায় দূষণ রোধে যে বিপুল পরিমাণ বৃক্ষরোপণ প্রয়োজন, তা করে ওঠা যাচ্ছে না।
এক দিকে রাজ্যের অন্যান্য বন বিভাগ বৃক্ষরোপণের জন্য যখন লক্ষ লক্ষ চারাগাছ তৈরি করছে, তখন চারা বিতরণের ক্ষেত্রে অরণ্যসপ্তাহ ভরসা হাওড়া বন বিভাগের। দফতরের ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘সাধারণত বনসৃজন বা বৃক্ষরোপণ নিয়ে বছরভর একাধিক কর্মসূচি থাকে। কিন্তু হাওড়া শহরে নিজস্ব জায়গা না থাকায় তা করা যাচ্ছে না। বর্তমানে তাই সেচ দফতরের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি, হাওড়ার বিভিন্ন খালের ধারে যদি বনসৃজন করতে দেওয়া হয় বন দফতরকে।’’ কিন্তু সেই সবুজ সংকেত আজও মেলেনি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)