ডিজে বাজিয়ে চলছে দাহকার্য। উলুবেড়িয়ার রাজাপুর গ্রামে। ছবি: সুব্রত জানা
ব্যান্ডেলের পর উলুবেড়িয়া।
ফের একশো বছর পার করা এক বৃদ্ধার অন্তিম-যাত্রায় ডিজে বাজল তারস্বরে। ফাটল বাজিও। পথচারীরা তো বিরক্ত হলেনই, শ্বদের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হলেন শ্মশান-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারাও।
সোমবার রাত সওয়া ৯টা নাগাদ মারা যান উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের রাজাপুর গ্রামের তারাবালা রায় নামে ওই বৃদ্ধা। পরিবারের লোকজনের দাবি, তাঁর বয়স হয়েছিল ১১২ বছর। মাসখনেক ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। খাওয়া-দাওয়া কমে গিয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে গ্রামের শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য হয়। কিন্তু শোকযাত্রা পরিণত হয়েছিল শোভাযাত্রায়!
ডিজে-র কানফাটানো আওয়াজ এবং বাজির দাপটে পথচারীরা প্রথমে বুঝতেই পারেননি কেন শোকযাত্রায় এমন উল্লাস! বৃদ্ধার বৃদ্ধার নাতি-নাতনিদের দাবি, এ সবই তাঁর অন্তিম ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা জানাতে। ঠাকুমা তাঁদের বলে গিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুতে কেউ যেন কান্নাকাটি না করে। বাজনা বাজিয়ে, বাজি ফাটিয়ে তাঁর দেহ যেন দাহ করা হয়। রজনীগন্ধা, গাঁদা আর গোলাপে সাজানো হয় তাঁর শেষ শয্যা। রাস্তা জুড়ে ফুল ছড়ানো হয়।
ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল তারাবালাদেবীর। ছেলমেয়ের সংখ্যা ১১। পুত্রবধূ, জামাই, নাতি-নাতনি মিলিয়ে পরিবারের সদস্য শতাধিক। তাঁর বড় মেয়ে মাতন মণ্ডলের বয়স ৯২ বছর। তারাবালাদেবী দাইমার কাজ করতেন। তাঁর হাতে গ্রামের কয়েকশো শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে।
কিন্তু বৃদ্ধার শেষযাত্রায় এমন উল্লাস মানতে পারেননি গ্রামের অনেকেই। তাঁদেরই একজন বলেন ‘‘মৃত্যু বেদনার। সেটা যে বয়সেই হোক না কেন। কিন্তু মৃতার পরিবারের এমন উল্লাস খানিকটা বিচলিত করল।’’
গত মাসের ২৪ তারিখ অনেকটা এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ব্যান্ডেলেও। ১০৭ বছরের সাবিত্রী মণ্ডলের মৃত্যুতে ডিজে বাজিয়ে শ্মশানযাত্রা হয়েছিল। পরিবেশপ্রেমীরা ডিজে বন্ধ করার জন্য হুগলির জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন।
উলুবেড়িয়ার ক্ষেত্রেও ডিজে-র বিরুদ্ধে কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ, ডিজে বাজানো নিষিদ্ধ। উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের বিডিও অতনু দাস অবশ্য জানিয়েছেন, ডিজে বাজিয়ে় দাহ করা নিন্দনীয় ঘটনা। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy