চাঁপদানির ডালহৌসি জুট মিলে বিশ্বকর্মা পুজোর ফাঁকা মণ্ডপ। বাউড়িয়ায় একটি জুট মিলে আলোকসজ্জা (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
শিল্পের খোঁজে স্পেনে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুরের জেলা হুগলি চায়, ভারী শিল্প আসুক এখানে। কারণ, এক সময় যে শিল্পাঞ্চলে সোনা ফলত, এখন তার হাল নিয়ে শঙ্কিত শ্রমিক। বিশ্বকর্মা পুজোয় বিভিন্ন কল-কারখানা চত্বর এবং শ্রমিক মহল্লায় ঘুরে আরও এক বার সেই ছবিই ধরা পড়ল। হাওড়ায় অবশ্য ভিন্ন চিত্র। বিশ্বকর্মা পুজোকে কেন্দ্র করে মেতে উঠেছে হাওড়া শিল্পাঞ্চল।
হুগলির চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিলে গত বছর বিশ্বকর্মা পুজো হয়নি। মিল বন্ধ ছিল। এ বার মিল খোলা। দেব-সেনাপতির পুজোও হয়েছে। সেই উপলক্ষে শ্রমিক, মিলকর্তা, শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা হাজির হয়েছেন। ডানকুনিতে দিল্লি রোড এবং দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া বিভিন্ন কারখানাতেও পুজোর আনন্দ চোখে পড়েছে।
কিন্তু, এই ছবি খণ্ড চিত্র। সামগ্রিক ছবি নয়। এক সময় হুগলিতে যে দুই কারখানায় বিশ্বকর্মা পুজোকে ঘিরে আদতে দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন শুরু হয়ে যেত, তার একটির দরজা ২০১৪ সাল থেকে বন্ধ। অন্যটি নিলামে উঠেছে। একটি হিন্দমোটর। ভারতের প্রথম মোটরগাড়ি তৈরির ঠিকানা। অন্যটি সাহাগঞ্জের ডানলপ। দেশের প্রথম টায়ার কারখানা।
সোমনাথ মজুমদার টানা ৩০ বছর হিন্দমোটর কারখানার প্রেস শপে কাজ করেছেন। সে দিনের কথায় আজও গলায় অন্য আবেগ তাঁর। বলেন, ‘‘বিশ্বকর্মা পুজোর দিন কারও বাধা ছিল না কারখানার ভিতরে ঢুকতে। সবাই ঢুকতে পারতেন। পুজোর মেজাজ আর কারখানার ভিতরে ঘুরে দেখা বাড়তি পাওনা ছিল। এক সময় ১৮ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। এখনও চাই, কারখানা খুলুক।’’ তিনি যাই বলুন, কারখানার তিনশো শ্রমিকের রাজ্য সরকারের দেওয়া বন্ধ কারখানার শ্রমিকের ভাতার যৎসামান্য টাকাই ভরসা। কারখানার শ্রমিক আবাসনে এখনও ৪০টি শ্রমিক পরিবার থাকে। যাঁদের অন্যত্র বাড়ি ভাড়ার সঙ্গতি নেই। ডানলপের দশা আরও করুণ। এই কারখানা নিলামে উঠেছে আদালতের নির্দেশে। কারণ, কর্তৃপক্ষ পাওনাদারদের বকেয়া মেটাতে পারেননি।
হুগলির শিল্পচিত্রে জুটমিলের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সেই দিন আর নেই। মোট ৯টি জুটমিলের মধ্যে ওয়েলিংটন বাদে বাকিগুলি খোলা থাকলেও হাল ভাল নয়। বিশ্বকর্মা পুজোয় নর্থব্রুক, ডালহৌসি, অ্যাঙ্গাস জুটমিলের শ্রমিক মহল্লায় ঘুরতেই, তা স্পষ্ট হল। শ্রমিকেরা জানালেন, বিশ্বকর্মা পুজোকে কেন্দ্র করে এক সময় উৎসবে মেতে উঠত মহল্লা। সেই জৌলুস উধাও। কারণ, মিল খুঁড়িয়ে চলছে। অনেক মিলে বছরের বেশির ভাগ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকে। স্থায়ী শ্রমিকদের বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কম মজুরিতে ঠিকা শ্রমিক এনে কাজ করাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। বহু শ্রমিক অন্যত্র চলে গিয়েছেন অন্য কাজের আশায়। এই অবস্থায় মিলে নিয়ম মাফিক পুজো হলেও শ্রমিকের মনের আনন্দ ফিকে।
একই ছবি কুন্তীঘাটের কেশোরাম রেয়নে। এক যুবক বলেন, ‘‘গত বছর কাজে ঢুকেছিলাম। মাসে এক-দু’দিন কাজ পেতাম। কয়েক মাস পরে বেড়ে ১০-১৫ দিন হয়। মাসের অর্ধেক দিন কাজ করে সংসার চলে না। তাই ছেড়ে দিয়েছি।’’ সম্প্রতি সেখানে স্বেচ্ছাবসর নেওয়া শতাধিক শ্রমিক বকেয়া না পেয়ে আন্দোলনে নেমেছে।
হাওড়া জেলায় অবশ্য বর্তমানে শিল্প পরিস্থিতি ভাল। সাম্প্রতিক সময়ে কোনও কারখানা বন্ধ হয়নি বললেই চলে। জেলার শিল্পাঞ্চল হিসাবে পরিচিত উলুবেড়িয়া, বাউড়িয়া, সাঁকরাইল, ধূলাগড়— সব জায়গাতেই রমরমিয়ে হয়েছে বিশ্বকর্মা পুজো। শ্রমিকরা ছিলেন উৎসবের মেজাজে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy