Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Handloom Saree

গ্রামের অর্থনীতি ধুঁকছে, পুজোয় শাড়ি কিনবে কে?

ধনেখালি ইউনিয়ন তাঁতশিল্পী সমবায় সমিতি এখানকার অন্যতম বড় সমিতি। শো-কেস ভর্তি শাড়ি। পুজোর ক’দিন আগেও এক দুপুরে মাছি তাড়াতে দেখা গেল কর্মীদের।

ধনেখালির একটি গ্রামে তাঁত বুনছেন শিল্পী। ছবি: দীপঙ্কর দে

ধনেখালির একটি গ্রামে তাঁত বুনছেন শিল্পী। ছবি: দীপঙ্কর দে

প্রকাশ পাল
ধনেখালি শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৫৮
Share: Save:

১০০ দিনের কাজ নেই। আলুর ফলন নেই। শাড়ি কেনারও লোক নেই ধনেখালিতে।

তাঁতের শাড়ি মানেই হুগলির ধনেখালি। এক সময়ে পুজোর মরসুমে দম ফেলার সময় পেতেন না তাঁতশিল্পীরা। দোকানগুলিতে ভিড় উপচে পড়ত। ২০২০-২১ সালে ধাক্কা দিল কোভিড। মার খেল ব্যবসা। আর এ বার ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। গ্রামবাসীদের হাতে টাকা নেই। শাড়ি কিনবে কে?

ধনেখালি ইউনিয়ন তাঁতশিল্পী সমবায় সমিতি এখানকার অন্যতম বড় সমিতি। শো-কেস ভর্তি শাড়ি। পুজোর ক’দিন আগেও এক দুপুরে মাছি তাড়াতে দেখা গেল কর্মীদের। তাঁরা জানান, আগের দিন বিক্রির অঙ্ক মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা। শুয়ে-বসে দিন কাটছে।

সমবায়টির সম্পাদক অনুপকুমার দাসের কথায়, ‘‘বেচাকেনা হবে কী করে? মানুষের পকেট ফাঁকা। বাইরের রাজ্যে শাড়ির চাহিদা থাকলেও সেই বাজার ধরার পরিকাঠামো আমাদের নেই।’’ এই সমবায়ের হিসাব, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ৯২ লক্ষ টাকার শাড়ি বিক্রি হয়েছিল। ২০১৫-১৬ সালে ৯১ লক্ষ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে তা ৬৪ লক্ষে দাঁড়ায়। চলতি আর্থিক বছরে শাড়ি বিক্রির যা বহর, মাথায় হাত সমবায় কর্তাদের। কোভিড পরিস্থিতিতেও যা বেচাকেনা ছিল, এ বারে তা-ও নেই।

এই সমবায়ে এক সময়ে তিনশোরও বেশি তাঁতশ্রমিক ছিলেন। এখন ১৭০ জন। প্রৌঢ় জগবন্ধু মণ্ডল ছেলেবেলা থেকে তাঁত বোনেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, আগে শাড়ি পড়ে থাকত না। এখন অনেক কম উৎপাদন সত্ত্বেও পড়ে থাকছে। সমবায়ের গোডাউন-কিপার অভিজিৎ বেরার কথায়, ‘‘খরিদ্দারের এত চাপ থাকত এই সময়ে যে কত দিন টিফিন বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছি, খাওয়ার সুযোগ পাইনি। এখন ফাঁকা বাজার।’’

ধনেখালি ইউনিয়ন সমবায় তাঁতশিল্পীদের আর একটি সমবায়। সেটার সম্পাদক দীনবন্ধু লাহাও বলেন, ‘‘এক সময়ে পুজোর আগের দেড় মাসে মোটামুটি ৪০ লক্ষ টাকার শাড়ি বিক্রি হত। ৪-৫ বছর আগেও তা ২৭-২৮ লক্ষ ছিল। এ বার ১০ লক্ষও হবে বলে মনে হচ্ছে না।’’

সমবায়ের কর্তারা জানান, গত তিন বছরে শাড়ির দাম বাড়েনি। সুতো বা অন্য সরঞ্জামের দাম প্রচুর বেড়ে যাওয়ায় এ বার ৪০-৫০ থেকে ৭০-৮০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। সাড়ে চারশো থেকে প্রায় ১৬০০ টাকা মূল্যের শাড়ি রয়েছে।

শিল্পীদের খেদ, নোটবন্দি, জিএসটি, করোনা, মানুষের আর্থিক পরিস্থিতি, মেয়েদের শাড়ি পড়ার প্রবণতা কমে যাওয়া, শাড়ির নকশায় নতুনত্ব না আসা— সব কিছুই কোপ বসিয়েছে শি‌ল্পে। তাঁত বুনতে খাটনি প্রচুর। শিল্পীর সঙ্গে বাড়ির এক বা দু’জনকে পরিশ্রম করতে হয়। যা আয় হয়, সংসার চলে না। ফলে, নতুন প্রজন্ম মুখ ঘুরিয়েছে। সোমসপুরের সমবায়টিতে আগে তসরের শাড়ি তৈরি হত। এখন হয় না।

এখানকার হারপুরের চম্পা দাস মাঠা শাড়ি বোনেন। স্বামী রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। মেয়ে মৌসুমি বিএ তৃতীয় বর্ষের দর্শন অনার্সের ছাত্রী। তিনি মাকে সাহায্য করেন। চম্পার কথায়, ‘‘মা-মেয়ে খেটে দু’দিনে একটা শাড়ি বুনতে পারি। মজুরি ১৪৫ টাকা। অবস্থাটা বুঝুন।’’

বেগমপুর তাঁতও একই ভাবে ধুঁকছিল। এখানে বহু তাঁতি পেশা পরিবর্ত‌ন করেছেন। অনেকে যন্ত্র কিনে গেঞ্জির কলার তৈরি শুরু করেন। কেউ ১০০ দিনের কাজ বা অন্য পেশা বেছে নেন। কয়েক বছর আগে রাজ্য সরকারের মধ্যস্থতায় তাঁতের ক্লাস্টার হয়েছে। সমবায়ের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তিতে শ’দুয়েক তাঁতি তাঁত বুনছেন। মজুরি মিলছে আগের চেয়ে বেশি। তন্তুজের মতো সংস্থা সমবায় থেকে শাড়ি কেনে।

কিন্তু সুদিন এখনও দূর অস্ত্।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Handloom Saree Durga Puja 2022 Dhaniakhali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE