বহু বছর আগে ‘সজল ধারা’ প্রকল্পে ছোট ছোট জল প্রকল্প তৈরি হয়েছিল। সেই সব প্রকল্পের মাধ্যমেই প্রথম বাড়ি বাড়ি জল দেওয়া শুরু হয়। সেই ‘সজল ধারা’ প্রকল্পই এখন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘সজল ধারা’ প্রকল্পে জলের পাইপ লাইনগুলি মাটি থেকে এক বা দেড় ফুট নীচে পাতা হয়েছে। অন্য দিকে, ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পের পাইপ লাইন পাতা হচ্ছে কম করে এক মিটার বা ফুট তিনেক নীচে। এই অবস্থায় ‘জল জীবন মিশন’-এর পাইপ লাইন পাতার সময়ে অনেক ক্ষেত্রে ‘সজল ধারা’র পাইপ লাইন ফেটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা জল পাচ্ছেন না।
বাগনান-১ ব্লকের বাগনান-২ পঞ্চায়েত, বাগনান-২, ডোমজুড়, শ্যামপুর, সাঁকরাইল ব্লকে ‘মাকড়শার জালের’ মতো ‘সজল ধারা’র পাইপ লাইন। এলাকাবাসী জানান, যেখানে যেখানে ‘সজল ধারা’ প্রকল্পের পাইপ লাইন পাতা হয়েছে, সেই সব লাইন বরাবরই নতুন করে পাইপ লাইন পাতছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। নতুন পাইপ লাইন পাতার সময়ে পুরনো পাইপ লাইন ফেটে গিয়ে জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জল সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার জন্য বাগনান-১ ব্লক প্রশাসনের সাথে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সমন্বয়ের অভাবকেই দায়ী করেছেন বাসিন্দাদের একাংশ।
বাগনান-১ ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ আবার পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে। তাঁদের দাবি, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর কোথায় পাইপ লাইন পাতবে, তা আগাম জানায় না। ফলে কোথাও ‘সজল ধারা’ প্রকল্পের পাইপ ফেটে বিপত্তি হলে কী ভাবে জল সরবরাহ করা যাবে, তার আগাম ব্যবস্থা করা যায় না। ফলে জলের অভাবে অনেক সময়ে বিক্ষোভ হয় যা সামাল দিতে হয় প্রশাসনকেই।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের একাংশের আবার পাল্টা অভিযোগ, পঞ্চায়েতকে বার বার বলা সত্বেও তারা কোন রুট দিয়ে সজল ধারার পাইপ লাইন গিয়েছে তার মানচিত্র দিতে পারে না। ফলে বিপত্তি ঘটে। পাইপ লাইন পাতার জন্য গর্ত খুঁড়তে গিয়ে সজল ধারার পাইপ লাইনে কোপ পড়ে।
সম্প্রতি বাগনানের খাদিনান গ্রামে বাগনান-আমতা রোডের ধার দিয়ে পাইপ লাইন পাততে গিয়ে রাস্তার ধারে নালার মতো হয়ে যায়। তা মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। কয়েক দিন আগে সেই কাঁচা মাটিতে বসে যায় একটি ভারী ট্রাক। প্রায় বারো ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল এই রাস্তায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ পাইপ লাইন পাতা হয়ে যাওয়ার পরে খোঁড়াখুঁড়ি পাকাপাকি ভাবে মেরামতির কাজ না হওয়াতেই বিপত্তি ঘটছে।
পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাওড়া ডিভিশন থেকে জানানো হয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর টাকা দিলে তবেই মেরামতির কাজ হবে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বক্তব্য, পাইপ লাইনে জল চার্জ করে দেখে নেওয়া হবে তা ঠিক আছে কিনা। তবেই রাস্তা মেরামতির টাকা দেওয়া হবে।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হাওড়া ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সৌরভ দাস বলেন, ‘‘জেলা থেকে ব্লক প্রশাসন সর্বত্র সমন্বয় কমিটি আছে। কোনও সমস্যা হলেই সম্মিলিত ভাবে মিটিয়ে নেওয়া হয়। মন্ত্রী পুলক রায়ের কড়া নির্দেশ, মানুষের অসুবিধা করা যাবে না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)