E-Paper

ক্ষতির শঙ্কা কম, ডুবেও গোলা ভরাবে ‘কনক’

সুস্মিতার দাবি, তিনি বাজারচলতি স্বর্ণ ধানের সঙ্গে খোলাধসা ও বাদামি শোষক পোকা প্রতিরোধী ‘আইআর ৩৬’ ধানের শঙ্কর করান।

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:২৪
‘কনক’-এর ফলন দেখছেন কৃষিবিজ্ঞানী সুস্মিতা কোলে।

‘কনক’-এর ফলন দেখছেন কৃষিবিজ্ঞানী সুস্মিতা কোলে। নিজস্ব চিত্র।

টানা দিন বারো গলা জলে দাঁড়িয়েও কিচ্ছুটি হয়নি ‘কনকের’! সে ভরিয়ে দিয়েছে খেত। বেজায় খুশি হুগলির পোলবা-দাদপুরের সাজেদ আলি ও তাঁর ছেলে শেখ আজহার।

চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের অধুনা অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী তথা প্রাক্তন যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা সুস্মিতা কোলে মূলত মেহনতি মানুষের কথা ভেবে কনক প্রজাতির ধান ফলিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন, এমন চাল বাজারে আনতে, যা তিন বেলা খাওয়া যাবে। পরের দিন পান্তাও। মোটা চাল, পেটে থাকবে বেশিক্ষণ। চাষিরও ভাল হবে। রোগপোকামুক্ত হবে। বন্যার জলেও গাছ বেঁচে থাকবে। ফলন হবে গোলাভরা।

কনক প্রজাতির ধান চাষ করে বর্ধমানের চাষি নীলু দাসের অভিজ্ঞতা, ‘‘কনকে খোলাপচা, মাজরা, শোষক পোকা একেবারেই নেই। ফলন স্বর্ণের থেকে অনেক বেশি।’’ মগরার রাকিবুল ইসলাম জানান, তাঁর এক আত্মীয় কনকে ভাল ফল পেয়েছেন। তিনিও কনক চাষ করবেন।

সুস্মিতার দাবি, তিনি বাজারচলতি স্বর্ণ ধানের সঙ্গে খোলাধসা ও বাদামি শোষক পোকা প্রতিরোধী ‘আইআর ৩৬’ ধানের শঙ্কর করান। সঙ্গে জোড়েন সরু লম্বা ও রোগপোকা কম থাকা ‘ক্ষিতীশ’ এবং সমুদ্র উপকূলের আবহাওয়া সহনশীল ও ভেপু পোকা প্রতিরোধী ‘মোহন’ প্রজাতির ধান। চারটির মিশেলে ‘কনকের’ জন্ম। কৃষক দেখলেন, জলে নিমজ্জিত অবস্থাতেও ‘সোনা’ ফলছে! রোগপোকার সমস্যা বহুল প্রচলিত স্বর্ণের (এমটিইউ ৭০২৯) থেকে অনেক কম। সঙ্ঘবদ্ধ এবং প্রচুর শিস। সোজা শক্ত কাণ্ড, ঢলে পড়ে না। ২০১৮ সালে দেশের গেজেটে কনকের (আইইটি ১৯৮৮৬) কথা প্রকাশিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে এটি চাষের ছাড়পত্র দেয় ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান সংস্থা (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চ বা আইসিএআর)।

সুস্মিতা-সহ একাধিক কৃষি বিজ্ঞানী জানান, করোনা-সহ নানা কারণে কনক কার্যত প্রচার পায়নি। এ ব্যাপারে কিছু দিন আগে সংশ্লিষ্ট কৃষিকর্তাকে চিঠি দেন সুস্মিতা। উদ্যোগী হয় দফতর। গত আমন মরসুমে হুগলির বৈঁচি, পোলবা-দাদপুর, পূর্ব বর্ধমানের কালনা, গুসকরা, মঙ্গলকোট, পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা ইত্যাদি জায়গায় কনকের চাষ হয়েছে। স্বর্ণের বিকল্প হিসাবে কনক চাষির মনে ধরেছে। তাঁরা জানান, এই ধান পাকতে স্বর্ণের থেকে দিন পাঁচেক বেশি সময় লাগে।

ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের প্রাক্তন যুগ্ম অধিকর্তা বর্তমানে বৈঁচির সিএডিসি-র (কমপ্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন) দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মাধবচন্দ্র ধারা বলেন, ‘‘এখানে কনকের বীজ মিলবে।’’ বন্যা-সহনশীলতা এবং রোগপোকা-প্রতিরোধী চরিত্র উল্লেখ করে তিনি জানান, মূলত মাঝারি নিচু জমিতে কনক উপযোগী। সুস্মিতার দাবি, সেচসেবিত হলে উঁচু জমিতেও কনক উপযুক্ত। অর্থাৎ, সবেতেই স্বচ্ছন্দ। ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের এক আধিকারিকের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘উঁচু জমিতে কনকের থেকে উপযোগী প্রজাতির ধান রয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chinsurah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy