Advertisement
০৫ মে ২০২৪
মনোরঞ্জনের কথায় বিরোধীদের সুর, দাবি যুবনেত্রীর
Manoranjan Byapari at Balagarh

২৩ লাখ ছড়িয়ে প্রধান, তোপ মনোরঞ্জনের

নেতানেত্রীদের কলেজে ঢোকার প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে কলেজেরই গেটের সামনে সভা করেন বিধায়ক। সঙ্গে ছিলেন দলের জিরাট অঞ্চল সভাপতি সঞ্জয় রায়, কলেজের সভাপতি মাহিরুল হক।

কলেজ গেটের বাইরে সভা বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর।

কলেজ গেটের বাইরে সভা বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বলাগড় শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:২৬
Share: Save:

কলেজের গেটের সামনে কিছু লোকের মাঝে দাঁড়িয়ে বিধায়ক তোপ দাগছেন দলেরই পঞ্চায়েত প্রধানকে লক্ষ্য করে! ‘মাটি মাফিয়া’, ‘বালি মাফিয়া’ বলে সম্বোধন করছেন দলেরই এক নেত্রীকে! হুগলির বলাগড় বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের সামনে বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর এই বক্তব্যের ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে। পাল্টা বিধায়কের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে অন্য পক্ষ।

কলেজের ‘দখল’ নিয়েই এই দ্বন্দ্ব বলে মনে করছে বিরোধী থেকে তৃণমূলের একাংশ। ঘটনায় অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের শ্রীরামপুর-হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইনের দাবি, ‘‘কী হয়েছে, জানি না। খোঁজ নেব।’’

তৃণমূল সূত্রে খবর, নবীন বরণ ও বাৎসরিক অনুষ্ঠান (সোশ্যাল) নিয়ে ওই কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুক্রবার আলোচনায় বসেছিলেন হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য তথা রাজ্য যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক রুনা খাতুন। কলেজের মাঠে ওই আলোচনায় সঙ্গে ছিলেন জিরাটের প্রধান তথা বলাগড় ব্লক তৃণমূল সহ-সভাপতি তপন দাস, উপপ্রধান অশোক পোদ্দার, ব্লকের যুব সভাপতি সন্তু ঘোষ, সিজা-কামালপুরের উপপ্রধান অরিজিৎ দাস (রুনার স্বামী) ও পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ শীল।

ওই নেতানেত্রীদের কলেজে ঢোকার প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে কলেজেরই গেটের সামনে সভা করেন বিধায়ক। সঙ্গে ছিলেন দলের জিরাট অঞ্চল সভাপতি সঞ্জয় রায়, কলেজের সভাপতি মাহিরুল হক। কয়েক জন ছাত্রও ছিলেন। সমাজমাধ্যমে ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, নাম না করে দলের এক নেত্রীকে ‘বালি ও মাটি মাফিয়া’ সম্বোধন করছেন বিধায়ক। তপনের শিক্ষাগত যোগ্যতা, কী করে তিনি শিক্ষকতার চাকরি পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিধায়ককে বলতে শোনা যায়, ‘‘প্রধান (তপন) হওয়ার জন্য ২৩ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছেন।’’ তপনকে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদেরও কটাক্ষ করেন বিধায়ক। দলের নেতানেত্রীদের নামে আরও নানা কটূ কথা বলেন তিনি।

ওই সভা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে দলের অন্দরে। তপনের বক্তব্য, ‘‘উনি (বিধায়ক) আমার বাড়িতে এসে মার্কশিট দেখে যান। আমার প্রধান হওয়ার জন্য তিনি সুপারিশ করেছিলেন। তিনি কত টাকা ভাগ পেয়েছেন আমার থেকে?’’ কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সামনে ‘নাক’-এর প্রস্তুতির জন্য পরিকাঠামোগত কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য তাঁদের অনুরোধে প্রধান এবং উপপ্রধান কলেজে এসেছিলেন। সঙ্গে দু’এক জন জনপ্রতিনিধি আসেন। রুনাও জনপ্রতিনিধি হিসাবে এসেছিলেন পরিকাঠামো নিয়ে কথা বলতে।

তপন বলেন, ‘‘কলেজের সামনের রাস্তা সংস্কার করা নিয়ে অধ্যক্ষের ডাকে আলোচনার জন্য গিয়েছিলাম। পরে ছাত্রছাত্রীদের কলেজের উন্নতি প্রসঙ্গে পরামর্শ দিয়েছি। বিধায়ক এক জন সাহিত্যিক। যে ভাষায় উনি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন, ভাবতেও লজ্জা হয়।’’ রুনার প্রতিক্রিয়া, ‘‘একজন বিধায়ক কলেজের সামনে সমাজবিরোধী, জুয়ার ঠেক চালানো লোকজন, বহিরাগতদের নিয়ে সভা করলেন। ওই ভিডিয়ো দেখে আতঙ্কিত অভিভাবকেরা কলেজে ছেলেমেয়েকে কী করে পাঠাবেন? বিধায়ক বিরোধীদের হয়ে কথা বলছেন। ধিক্কার জানাচ্ছি।’’

রবিবার বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে বিধায়ক কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রিনা প্রামাণিক বলেন, ‘‘কলেজকে রাজনীতির আখড়ায় পরিণত করছে তৃণমূল। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অতনু ঘোষ বলেন, ‘‘কলেজ দখল নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পড়ছে। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের প্রতিবাদ জানানো উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manoranjan Byapari Balagarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE