E-Paper

স্থানীয় শ্রমিকের অভাব, ভাটায় ভরসা পরিযায়ীরা

মাটি থেকে ইট বানানোর কাজটিই কঠিন। দক্ষ শ্রমিকদের এই কাজ দেওয়া হয়। তাঁদের বলা হয় ‘গড়ন মিস্ত্রি’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:২২
ইট ভাটায় কর্মরত এক পরিযায়ী শ্রমিক।

ইট ভাটায় কর্মরত এক পরিযায়ী শ্রমিক। —ফাইল চিত্র।

স্থানীয় শ্রমিকের আকাল দেখা দিয়েছে হাওড়ার শ্যামপুরের ইটভাটাগুলিতে। বিশেষত দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। ভিন্‌ রাজ্যের শ্রমিকদের উপরে নির্ভরতা বাড়ছে। বাড়ছে
যন্ত্র-নির্ভরতাও। পরিস্থিতির জন্য ভাটা-মালিকদেরই দুষছেন শ্রমিক নেতারা। অভিযোগ মানেননি ভাটা-মালিকেরা।

শ্যামপুর থানা এলাকা জুড়ে প্রায় দেড়শো ইটভাটা আছে। এখানকার নিজস্ব শিল্প বলতে একমাত্র ইটভাটাই। প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এক সময় ৮০ শতাংশ শ্রমিকই ছিলেন স্থানীয়। বাকিরা ভিন্‌ রাজ্যের। স্থানীয় সূত্রের খবর, এখন বেশিরভাগ ভাটায় ৬০ শতাংশ শ্রমিকই পরিযায়ী।

মাটি থেকে ইট বানানোর কাজটিই কঠিন। দক্ষ শ্রমিকদের এই কাজ দেওয়া হয়। তাঁদের বলা হয় ‘গড়ন মিস্ত্রি’। তাঁদের মজুরি বেশি। এক সময়ে এই কাজ একচেটিয়া করতেন স্থানীয় শ্রমিকেরা। ভাটা মালিকদের একাংশের দাবি, গড়নের কাজে স্থানীয় শ্রমিকদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। শ্যামপুর থানা ব্রিক ফিল্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তন্ময় শী বলেন, ‘‘গড়ন মিস্ত্রি দৈনিক হাজার টাকাও রোজগার করতে পারেন। তাতেও স্থানীয় শ্রমিক মিলছে না। এলাকায় প্রচার করেও শ্রমিকের জোগান বাড়েনি।’’

কেন?

ভাটা-মালিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, রোজগার বেশি হলেও গড়নের কাজ প্রচুর পরিশ্রমসাধ্য। তাই, এখনকার যুবকেরা আগ্রহী নন। মাথায় ইট বওয়া, মাটি কাটার কাজেও স্থানীয় শ্রমিকদের অভাব হচ্ছে। বংশী কর নামে এক ভাটা-মালিক জানান, গড়নের কাজে বেশি করে পরিযায়ী শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে। মাটি বহনের জন্য টোটো কেনা হয়েছে। মাটি কাটা হচ্ছে যন্ত্রে।

এই কাজে বিমুখ শ্রমিকেরা অবশ্য ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথাই শোনাচ্ছেন। রঞ্জন মাইতি নামে শ্যামপুরের এক যুবকের দাবি, ভাটায় কাজ হয় বছরে আট মাস। বেতন নিয়মিত দেওয়া হয় না। তাই সেই কাজ ছেড়ে তিনি উলুবেড়িয়ার একটি কারখানায় কাজ করছেন। বেতন অপেক্ষাকৃত কম হলেও, নিয়মিত সারা বছর কাজ মেলে।

ফরওয়ার্ড ব্লক প্রভাবিত ভাটা শ্রমিক সংগঠনের নেতা অসিতবরণ সাউয়ের অভিযোগ, করোনা এবং আমপানের পরে ভাটা-শিল্পে মন্দা দেখা দেয়। শ্রমিকদের দাবিদাওয়া মেটানোর প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন মালিকদের বড় অংশ। ভাটার পরিবেশ, বেতন না বাড়া, উৎসব-ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা ইত্যাদি কারণে বহু শ্রমিক ভাটা থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেন। শ্যামপুরের তৃণমূল বিধায়ক কালীপদ মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘ভাটা মালিকদের একাংশ শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন করেন। বেশি মজুরি দিয়ে কিছু শ্রমিককে ভাঙিয়ে আনেন অন্য ভাটা থেকে। ফলে, বাকি শ্রমিকেরা কম মজুরিতে কাজ করতে রাজি
হচ্ছেন না।’’

ভাটা মালিকদের যুক্তি অন্য। তন্ময়ের কথায়, ‘‘আমরা চাই, স্থানীয়েরা কাজ করুন। কিন্তু নতুন প্রজন্মের ছেলেরা পরিশ্রমসাধ্য কাজে রাজি নন। শ্রম আইন মেনে শ্রমিকদের সব সুবিধা এবং পরিবেশ বজায় রাখা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

brick kiln Shyampur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy